নারায়ণগঞ্জে প্রতারকচক্রের ৩ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব

জয়নাল আবেদীন বিজিবিতে চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর তিনি গড়ে তোলেন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। চক্রের সদস্যরা পরিচয় দিতেন কখনো র‍্যাবের এসআই হিসেবে, কখনো ওয়ারেন্ট অফিসার। এভাবেই তাঁরা বিজিবিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে লোকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমস্যা সমাধান করার নামে এবং মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদশালী লোকজনের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব গত শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ভুয়া র‍্যাব সদস্যকে আটক করে। তাঁদের কাছ থেকে র‍্যাবের পোশাক পরা দুটি ছবি, বাংলাদেশ র‍্যাব লেখা ও র‍্যাবের মনোগ্রামসহ একটি জ্যাকেট, র‍্যাব সদর দপ্তরের সিল ও র‍্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ভুয়া সইসহ সাতটি নোটিশ, র‍্যাব সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সিল, বিজিবি এক সেট পোশাক এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ জব্দ করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‍্যাব-১১-এর ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন এ তথ্য জানান। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন র‍্যাবের উপপরিচালক মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব।

আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—কুড়িগ্রাম জেলার উকিলপুর থানাধীন মাসতীবাড়ী দীঘর এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে জয়নাল আবেদীন (২৭), গাজীপুর জেলার সদর থানাধীন জান্দালিয়া পাড়া এলাকার মৃত মুসলেম উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হোসেন (২৭) ও কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী থানাধীন চরজাকারিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৯)।

কাজী শামসের উদ্দিন জানান, প্রতারক চক্রের দ্বারা প্রতারিত ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে দেখা যায় যে, প্রতারক চক্র এক ব্যক্তিকে র‍্যাব সদর দপ্তরের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের সিলমোহর ব্যবহার করে নিজেদের তৈরি একটি ভুয়া নোটিশ পাঠায়। নোটিশ থেকে পাওয়া মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা টাকা দেওয়ার বিনিময়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাস দেয়। অন্যথায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টাকা গ্রহণ করার সময় ওত পেতে থাকা র‍্যাবের সদস্য তাঁদের হাতেনাতে আটক করে।

জানা যায়, প্রতারক চক্রের সদস্যদের বর্তমান ঠিকানা গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এলাকায়। এই চক্রের প্রধান আসামি জয়নাল আবেদীন আগে বিজিবিতে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে তিনি বিজিবি থেকে পালিয়ে যায়।

লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, প্রতারক চক্র ভুয়া কাগজপত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সেগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিত। তাঁরা মানুষের শ্রেণি বুঝে কখনো র‍্যাবের, কখনো বিজিবির পরিচয়ে কাজ করত। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।