'প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারি না'

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আসছেন সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। সেগুন বাগিচা, ঢাকা, ২৫ আগস্ট। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আসছেন সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। সেগুন বাগিচা, ঢাকা, ২৫ আগস্ট। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

অধীন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি চিহ্নিত করতে না পারাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সংস্থার প্রধান হিসেবে আমি প্রশাসনিক ব্যর্থতার এ দায় এড়াতে পারি না।’

আজ রোববার সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ‘যে ঘটনা নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে, সেটা সম্পর্কে বক্তব্য জানতে আমাকে দুদক ডেকেছিল। আমি আমার বক্তব্য বলেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। কারণ, তাঁদের এই দুর্নীতি আমি আইডেন্টিফাই করতে পারিনি। বলতেই হবে এটা আমার ব্যর্থতা। বাকিটুকু প্রমাণসাপেক্ষ। তদন্তে কী বেরিয়ে আসে, সেটা দুদক বলবে।’

চট্টগ্রাম কারাগারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনকে আজ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুপের নেতৃত্বে একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৩ ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কারাগারে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতেই সাবেক কারা মহাপরিদর্শকের বক্তব্য নেওয়া হয়।

এর আগে ৪ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার (বর্তমানে বরিশালের জেল সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিককে।
গত ২৮ জুলাই সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিককে একই অভিযোগে অনুসন্ধানের অংশ হিসেব জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁকে নিয়ে অভিযানে বের হয় দুদক দল। তাঁর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৮০ লাখ টাকা।

দুদক সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে ভৈরবে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সেখানে তল্লাশির একপর্যায়ে তাঁর দুটি ব্যাগ থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (এফডিআর), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি চেকবই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় উঠে আসে চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপাল বণিক ও বরিশালের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের নাম। দুদকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়। পরে পার্থকে বদলি করা হয় সিলেটে, প্রশান্তকে বরিশালে।

টাকাসহ গ্রেপ্তার হওয়া ডিআইজি পার্থ বর্তমানে দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজনস থাকার সময় পার্থ গোপাল বণিক দুর্নীতি আর অনিয়মকে ব্যাপকভাবে প্রশ্রয় দিয়েছেন। প্রতিদিন সেখানে গড়ে ৩০ লাখের বেশি টাকা অবৈধভাবে আদায় হতো। আর সেটা বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ-বাঁটোয়ারা হতো। এ কাজে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক ও জেল সুপার সোহেল রানা। দুদকের তথ্যমতে, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বন্দী বেচাকেনা, হাসপাতালে ভর্তি, ক্যানটিনের অবৈধ আয়, মাদক-বাণিজ্য থেকে ওই সব অর্থ আসত। আর ওই সব অর্থ আনুপাতিক হারে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো।