ভাঙা সেতুর রেলিংয়ে বাঁশ

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর রেলিংটি আবার বাঁশ দিয়েই মেরামত করেছে সড়ক বিভাগ। শনিবার দুপুরে রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে ৮ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর রেলিংটি আবার বাঁশ দিয়েই মেরামত করেছে সড়ক বিভাগ। শনিবার দুপুরে রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে ৮ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর রেলিংটি আবার বাঁশ দিয়েই মেরামত করেছে সড়ক বিভাগ। গত শনিবার দুপুরে রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে ৮ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হন। শনিবার বিকেলে সড়ক বিভাগ রেলিংটি মেরামত করে।

গতকাল রোববার দুপুরে ধুলদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ভাঙা রেলিংটি বাঁশ দিয়েই মেরামত করা হয়েছে। তবে সেতুর দুই পাশে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের উদ্যোগে গতিরোধক (রামবল ট্রিক) নির্মাণ করা হয়েছে। উভয় পাশে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ, সাবধানে চলাচল করুন’ মর্মে বড় আকৃতির নতুন সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়েছে।

পুনরায় বাঁশ দিয়ে সেতুর রেলিং মেরামত করার ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুল বারী প্রথম আলোকে জানান, এটি একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ। দু-এক দিনের মধ্যেই ওই রেলিং স্টিলের অ্যাঙ্গেল দিয়ে মেরামত করা হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতু আনুমানিক ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। সংস্কার করার সুযোগ নেই বলে সেতুর পূর্ব পাশে ‘ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের’ আওতায় আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিন মাস আগে তিনি ফরিদপুর সড়ক বিভাগে যোগ দিয়েছেন। তাই তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি কবে থেকে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

গত শনিবার দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে পাশের নবনির্মিত সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। তবে গতকাল সকাল থেকে নতুন সেতুটি বন্ধ করে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, নতুন সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, তা বলা যাবে না। সেতুর ওপর আরও দুই স্তরে সিমেন্টের ঢালাই দিতে হবে এবং সংযোগ সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে ওই সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। শনিবার জরুরি প্রয়োজনে নবনির্মিত সেতুটি খুলে দেওয়া হলেও গতকাল থেকে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, তবে নতুন সেতুটি চালু করার জন্য তাঁরা জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই নতুন সেতুটির বাকি কাজ সম্পন্ন করে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

শনিবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের পাটগাতীগামী কমফোর্ট লাইনের একটি বাস ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী এলাকায় একই দিকের একটি মাহেন্দ্রকে ওভারটেক করতে গিয়ে সামনে থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলসহ সেতুর রেলিং ভেঙে ১৫ ফুট নিচে খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত হন ৮ জন এবং ১৮ জন আহত হন। এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে গতকাল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আসলাম মোল্লাকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল, সড়ক বিভাগের প্রতিনিধি, বিআরটিএর প্রতিনিধি।

অপরদিকে হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগে গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলামকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কে এম আবদুল্লাহ ও আল্লাহদীপুর হাইওয়ে থানার ওসি মাসুদ পারভেজ। দুই তদন্ত কমিটিকেই তাদের আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এফ এম নাছিম জানান, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে শনিবার রাতেই ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বাসের চালককে আসামি করা হয়েছে।

লাশ শনাক্ত

এদিকে নিহত আটজনের লাশ শনাক্ত হওয়ার পর তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মোটরসাইকেলচালক ফরিদপুর সদরের আলীয়াবাদ ইউনিয়নের বিলমাহমুদপুর গ্রামের ওহেদুজ্জামান (৪০), বাসযাত্রী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শিবপুর গ্রামের আবদুল্লাহ (২৫), গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম শেখের স্ত্রী আসমা বেগম (৩৫), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বনগ্রামের আলী খন্দকার (৭০) ও তাঁর নাতনি কেয়া (১৭), নড়াইলের নড়াগাতির কলাবাড়িয়া গ্রামের জামাল শেখের স্ত্রী লিপি বেগম (৩৫), গোপালগঞ্জের কাঠী গ্রামের ফারুক হোসেন (৫৫) এবং ওই বাসের সুপারভাইজার কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়ারা গ্রামের হানিফ শেখ (৪৫)।

আহতদের চিকিৎসা চলছে

দুর্ঘটনায় আহত ১৮ জনের চিকিৎসা চলছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা।