ফেসবুক থেকে হারানো মেয়েকে খুঁজে পেলেন বাবা-মা

নয় মাস পর শিশু রানীকে ফিরে পেলেন মা-বাবা। ছবি: সংগৃহীত
নয় মাস পর শিশু রানীকে ফিরে পেলেন মা-বাবা। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় বাড়ির পাশে খেলতে থাকা ছয় বছরের রানীকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে চুরি করে নিয়ে যান এক নারী। নয় মাস ধরে শিশু রানীর খোঁজ পাচ্ছিলেন না মা-বাবা। শেষ পর্যন্ত ফেসবুকের সূত্র ধরে মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। গতকাল রোববার রাতে বগুড়া সদর থানার পুলিশ শিশু রানীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করে।

একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে আবেগে ভাসছেন রানা শেখ ও লিপি বেগম দম্পতি।

মা লিপি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রানী ছিল আমার সংসারের রাজকন্যা। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে আমার সুখের রাজ্যটা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় বাকরুদ্ধ ছিলাম। নয় মাস পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরে পেয়েছি। রানী ফিরে আসায় সাত রাজার ধন ফিরে পেয়েছি।’

রানীর বাবা রানা শেখের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরাবাজার গ্রামে। বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে রানা শেখ শহরে রিকশা চালান। রানা শেখ বলেন, গত বছরের ১ ডিসেম্বর রানী বিসিক এলাকার সিএনজি স্টেশনের সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল। এ সময় এক নারী চকলেটের লোভ দেখিয়ে রানীকে ডেকে নেন। এরপর তাকে চুরি করে নিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির করেও রানীর সন্ধান না পেয়ে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

শিশু রানী। ছবি: সংগৃহীত
শিশু রানী। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের ধারণা, পাচারের জন্য রানীকে নেওয়া হয়েছিল হিলি সীমান্তে। সেখানে ঝামেলা হলে কয়েক দিন পর মেয়েটিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান পাচারকারী।

পুলিশ জানায়, কিছুদিন আগে শিশুটিকে বিরামপুর উপজেলার একটি রাস্তার পাশে কাঁদতে দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তিনি বিরামপুর থানার পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশকে রানী শুধু এটুকু বলতে পারে, তার মা-বাবা বগুড়ার সাতমাথা এলাকায় থাকেন। সেই সূত্র ধরে বিরামপুর থানার পুলিশ শিশুটির পরিবারের খোঁজ চেয়ে বগুড়া সদর থানায় বার্তা পাঠায়। বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মেয়েটির ছবি দিয়ে তার মা-বাবার সন্ধান চান। সেখান থেকে ছবিটি শেয়ার করেন সাখাওয়াত জনি নামের এক গণমাধ্যমকর্মী।

সাখাওয়াত জনির ফেসবুকে শেয়ার করা শিশুটির ছবি দেখে চিনতে পারেন বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় রানীদের প্রতিবেশী মাসুম তালুকদার। তিনি রানা শেখকে মেয়েটির ছবি দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হন। পরে রানা শেখ বগুড়া সদর থানায় যোগাযোগ করেন।

এক নারী চকলেট দিয়ে রানীকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া
এক নারী চকলেট দিয়ে রানীকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া

মাসুম তালুকদার বলেন, জয়পুরপাড়ার একটি সিএনজি স্টেশনের সিসিটিভির ফুটেজে শিশুটিকে এক নারী চুরি করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছিল। ফেসবুকে ছবি দেখে সিসিটিভির ফুটেজে দেখা শিশুটির কথা মনে পড়ে যায়। তখন শিশুটির বাবাকে ছবিটি দেখালে তিনি হারানো মেয়েকে শনাক্ত করেন।

রানা শেখ বলেন, বিরামপুর থানা থেকে গতকাল তাঁর মেয়েকে বগুড়া সদর থানায় নিয়ে আসা হয়।

গতকাল রাতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান ও পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম শিশু রানীকে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করেন।

থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল করিম বলেন, নয় মাস পর শিশুটিকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আনন্দঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়ে পরিবারটিতে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।