সড়কের মাঝখানে খুঁটি রেখেই চলছে সংস্কার

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঠেলাঠেলিতে সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে সংস্কারকাজ। সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের কলেজ রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঠেলাঠেলিতে সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে সংস্কারকাজ। সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের কলেজ রোডে। ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে দিরাই পৌর শহরের প্রধান সড়কটি বেহাল ছিল সাত বছর। এখন সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। একসময়ের সরু সড়ক এখন ৩২ ফুট প্রশস্ত হবে। কিন্তু সড়কের ওপরে থাকা বিদ্যুতের ১২টি খুঁটি সরানো নিয়ে জটিলতা থাকায় সংস্কারকাজ শুরু হয় পাঁচ মাস পর। খুঁটি সরাতে পৌরসভা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে চিঠি চালাচালি হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ফল হয়নি। ফলে খুঁটি রেখেই কাজ করছে পৌরসভা। এতে যানবাহন চলাচলে সমস্যার পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

দিরাই পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দিরাই শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি কলেজ রোড হিসেবে পরিচিত। এটি শহরের প্রধান সড়ক। গত সাত বছর কোনো সংস্কার হয়নি। এত দিন গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং দিরাই পৌরসভার মধ্যে ঠেলাঠেলিতে। কেউ-ই এই সড়কের কাজ করতে রাজি ছিল না। এলজিইডির দাবি ছিল, যেহেতু এটি পৌর শহরের ভেতরে, তাই তারা আর কাজ করতে পারবে না। পৌরসভার কথা ছিল, যেহেতু এলজিইডি সব সময় এই সড়কের কাজ করেছে, তাই তাদেরই সংস্কার করতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত পৌরসভা কাজ করতে রাজি হয়। সে অনুযায়ী এ বছরের প্রথম দিকে সড়ক সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারকে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার পর কাজ আটকে যায় সড়কে বিদ্যুতের খুঁটির কারণে। 

পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, একসময় ওই সড়ক সরু ছিল। এখন ৩২ ফুট প্রশস্ত হবে। এ কারণে সড়কের মধ্যে বিদ্যুতের ১২টি খুঁটি সরাতে হবে। এ জন্য পাঁচ মাস আগে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ না নেওয়া এখন খুঁটিগুলো যেভাবে আছে, সেভাবে রেখেই কাজ শুরু করা হয়েছে।

এ নিয়ে প্রথম আলোয় গত ১ জুলাই ‘খুঁটিতে আটকে আছে সংস্কারকাজ’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, দিরাই পৌর শহরের প্রবেশমুখেই বাসস্ট্যান্ড। এরপর বাঁ দিকে কলেজ রোড হয়ে শহরের ভেতরে যেতে হয়। এটাই মূল সড়ক। বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা পয়েন্ট পর্যন্ত দূরত্ব মাত্র ৬৮৬ মিটার। সড়কের দুই পাশে রয়েছে দোকানপাট আর মানুষের ঘরবাড়ি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে পানি জমে আছে। কোথাও কোথাও কাদা আর পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। এখন সড়কের দক্ষিণ দিকে ড্রেনের কাজ শেষে সড়ক ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ঢালাইয়ের ভেতরেই রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। কাজ শেষ হলে এসব খুঁটির কারণে যান চলাচলে সমস্যা হবে। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

দিরাই উপজেলার বাসিন্দা সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। তবে বিদ্যুতের পিলারগুলো এখনই সরানো উচিত। নাহলে পরে দেখা যাবে এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। এসব খুঁটির কারণে নানা দুর্ঘটনা ঘটবে।’

 দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এই সড়ক সংস্কারে প্রায় চার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। কাজ শুরু আগেই বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরাতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। তখন তারা জানায়, এটা পৌরসভার খরচে সরাতে হবে। তবে এ জন্য পৌরসভার কোনো বাজেট নেই। পরে বিদ্যুৎ বিভাগ আবার চিঠি দিতে বলে। চিঠি দেওয়া হলেও কোনো ফল হয়নি। মেয়র বলেন, ‘সড়কের যা অবস্থা, মানুষকে আর কত কষ্ট দেব। এখন বাধ্য হয়েই কাজ শুরু করতে হয়েছে।’ 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ম অনুয়ায়ী এসব খুঁটি পৌরসভার ব্যয়ে সরানোর কথা। কিন্তু তারা প্রকল্পে এ জন্য কোনো বাজেট রাখেনি। এটা তাদের ত্রুটি। এখন আমাদের খরচে খুঁটিগুলোর সরানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চেয়েছি। অনুমোদন পেলে খুঁটিগুলো সরানো হবে। তবে এ জন্য দুই-তিন মাস সময় লাগবে।’