দখল ঠেকাতে সওজের অনন্য উদ্যোগ

বারবার সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর আবার তা দখল হয়ে যায়। তাই এবার উচ্ছেদের পর সেসব স্থান ঘেরাও করে ফুলবাগান করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে শহরবাসী। গতকাল পাবনা শহরের অনন্তবাজারে।  ছবি: প্রথম আলো
বারবার সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর আবার তা দখল হয়ে যায়। তাই এবার উচ্ছেদের পর সেসব স্থান ঘেরাও করে ফুলবাগান করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে শহরবাসী। গতকাল পাবনা শহরের অনন্তবাজারে। ছবি: প্রথম আলো

টংঘর থেকে শুরু করে মুদিদোকান। কাঁচা তরকারি থেকে মাছ–মাংস বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছিল সড়কের এক পাশ দখল করে। এতে এক দিকে বেড়েছিল দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অপর দিকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছিলেন সেখানে থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকবার চালানো হয়েছিল উচ্ছেদ অভিযান। এরপর ফের দখল করে বাজার বসানো হয়। 

উচ্ছেদের পর দখল, দখলের পর উচ্ছেদ, আবার দখল—মোটামুটি এভাবেই চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে স্থানটি ঘেরাও করে ফুলের বাগান তৈরি করেছে। এতে পুনর্দখল বন্ধ হয়েছে। পাশাপাশি শোভাবর্ধন হয়েছে এলাকাজুড়ে। দখল ঠেকাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পাবনা জেলা শহরের অনন্ত বাজার এলাকার ইমাম গাজ্জালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে। 

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনন্ত নামের একটি সিনেমা হলকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে এই অনন্ত বাজার মোড়। স্থানটি জেলা শহরের প্রবেশদ্বার। সুজানগর-পাবনা সড়ক ও দ্বীপচর-পাবনা সড়ক এসে মিশেছে এই মোড়ে। তিন দিকে রয়েছে বেশ কিছু কলকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর একদিকে ইমাম গাজ্জালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ফলে জনসমাগম ও যানবাহনের চাপের কারণে স্থানটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর এ সুযোগে দীর্ঘদিন আগে সওজের পরিত্যক্ত কিছু জমিতে গড়ে উঠেছিল বিশাল বাজার। এতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়টি ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হয়েছিল। তৈরি হচ্ছিল তীব্র যানজট। বাজারের কারণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। 

সওজ সূত্রে জানা গেছে, জায়গাটি পরিষ্কার রাখতে গত ১০ বছরে অন্তত পাঁচবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানের কয়েক দিনের মধ্যে আবার পুনর্দখল করে অবৈধ দখলদারেরা। শেষ পর্যন্ত দখল বন্ধ করতে ফুলের বাগান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় পুরো এলাকা। ২১ আগস্ট পাবনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ সেখানে একটি ফুলের চারা রোপণ করে বাগানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এরপর সওজ বিভাগ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজন সেখানে ফুলের চারা রোপণ করতে থাকেন।

গতকাল রোববার সকালে দেখা গেছে, সেখানে লাগানো গাছে নতুন ফুল ফুটেছে। কিছু গাছ ফুল দেওয়ার অপেক্ষায়। বাহারি পাতায় আর ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নতুন এই উদ্যোগ শুধু দখলই বন্ধ করেনি, পুরো এলাকাটি মনোরম করে তুলেছে। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে পুরো শহর নান্দনিক হয়ে উঠবে। স্থানীয় বাসিন্দ হাসানুর রহমান বলেন, উদ্যোগটি তাঁকে বেশ নাড়া দিয়েছে। তাই তিনি নিজে থেকেই কিছু গাছ কিনে সেখানে রোপণ করেছেন। প্রতিদিন গাছগুলোর যত্ন করছেন। বেড়ে ওঠা গাছগুলো পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে। ইমাম গাজ্জালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া সুলতানা বলেন, স্কুলের সামনে একটি ফুলের বাগান থাকলে তা এমনিতেই ভালো লাগা তৈরি করে। তার ওপর এখন মেয়েরা খুব স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছে। অনন্য এই উদ্যোগকে তাঁরা সাধুবাদ জানান। 

সওজের পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ওই স্থানটিতেই নয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনেও উচ্ছেদ অভিযান চলার পরপরই ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগান হয়েছে। বেড়া উপজেলা সদর মোড়ে দখলমুক্ত করা একটি জমিতে শিশুদের খেলার মাঠ ও কাশীনাথপুর মোড়ে একটি বনজ বৃক্ষের বাগান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে যেখানেই উচ্ছেদ অভিযান চলবে সেখানেই বাগান করা হবে।