ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক নারীর স্বামীর (৩৫) ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে টয়লেটে যাওয়ার জন্য বাড়ির বাইরে এলে ওই নারীর স্বামীকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারটির। দগ্ধ ব্যক্তিকে রাতেই নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশ হয়। এতে ধর্ষণের শিকার নারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ওই স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও এই কর্মসূচিতে ছিলেন।

অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তির মা আজ সোমবার হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস আগে তাঁর পুত্রবধূর গোসলের দৃশ্য গোপনে মুঠোফোনে ধারণ করেন জয়নাল। পরে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে একাধিকবার পুত্রবধূকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে পুত্রবধূ প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে জয়নাল ভিডিওটি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় গত ২২ মে তাঁর ছেলে বাদী হয়ে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ জয়নালকে আসামি করে মামলা করেন। ৩ জুন জয়নাল পাল্টা বাদী হয়ে তিনি, তাঁর স্বামী, ছেলে, পুত্রবধূসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা করেন।

দগ্ধ ব্যক্তির মা জানান, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত জয়নালের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গতকাল একটি মানববন্ধনে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে দুপুরে তাঁরা বাড়ি ফেরেন। বেলা তিনটার দিকে জয়নাল ও তাঁর স্ত্রী এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া করেন।

দগ্ধ ব্যক্তির মা অভিযোগ করেন, রাতের খাবার খেয়ে তাঁরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক তিনটার দিকে তাঁর ছেলে টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন। বাইরে অল্প দূরে কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ‘কে?’ বলতেই তাঁদের একজন তাঁর ছেলেকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান। এ সময় চিৎকার শুনে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ছেলেকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মায়ের দাবি, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করার কারণেই তাঁর ছেলের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। অ্যাসিডে ছেলের পিঠ, হাত ও ঊরুর বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে। জয়নাল ও তাঁর লোকজনই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।

দগ্ধ ব্যক্তিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার কারণে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দগ্ধ ব্যক্তির অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, অ্যাসিড-জাতীয় কোনো দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে তাঁর শরীরের প্রায় ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

ধর্ষণ ও অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন জয়নাল। আজ দুপুরে মুঠোফোনে জয়নাল প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর স্বামী তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে যে মামলা করেছিলেন, তা পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা নিয়েও তিনি কিছু জানেন না।

সুবর্ণচরের চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাতে টহল পুলিশ ওই এলাকায় ছিল। রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে দগ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় পুলিশ কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও সঙ্গের লোকজন কিছু বলেননি। অ্যাসিড নিক্ষেপের কথা আজ সকালে শুনেছেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো কিছু জানানো হয়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।