দেশ আজ কার নিয়ন্ত্রণে চলছে, প্রশ্ন ড. কামালের

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা ও প্রতিরোধযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী ও ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৬ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা ও প্রতিরোধযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী ও ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৬ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী দেশ এখন জনগণের মালিকানায় আছে কি না, প্রশ্ন রেখে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, বিভিন্নভাবে অভিযোগ করতে হচ্ছে, দেশ আজকে কার নিয়ন্ত্রণে চলছে। বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা ষোলো আনা অমান্য করা হচ্ছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা ও প্রতিরোধযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ড. কামাল এসব কথা বলেন।

ড. কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক। আজ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেন আমরা কি মালিকের ভূমিকায় আছি? বিভিন্নভাবে অভিযোগ করতে হচ্ছে, দেশ আজকে কার নিয়ন্ত্রণে চলছে? পুলিশ কার আদেশে মানুষকে হয়রানি করছে? জনগণ যদি ক্ষমতার মালিকের ভূমিকায় থাকত, আজকে এ ধরনের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা থাকত না, নারী নির্যাতিত হতো না, হত্যাকাণ্ডের শিকার হতো না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ হলে এসব কল্পনা করা যেত না।’

সরকার এটাকে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বলার চেষ্টা করলেও মানুষ তা বিশ্বাস করবে না বলে উল্লেখ করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, সরকারের অবহেলা ও পুলিশকে যেভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে বঙ্গবন্ধুকে দৈনন্দিন অবমাননা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা হলেও তাঁর (বঙ্গবন্ধু) কথাকে ষোলো আনা অমান্য করা হচ্ছে।

গণফোরাম সভাপতি এ অবস্থা থেকে সমাজকে বের করে আনতে চান। তিনি জনগণের ঐক্যের ওপর জোর দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো জনগণকে আবার ঐক্যবদ্ধ দেখবেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণাকে সামনে রেখে ঐক্যের রাজনীতি করার কথা বলেন কামাল হোসেন। তিনি আরও বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর নাম নেয় কিন্তু মনে প্রাণে বিশ্বাস করে না, তারা অনৈক্যের রাজনীতি করে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তাদের স্বৈরাচার উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, স্বৈরাচারের বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে বিভক্ত করে রাখা, যাতে স্বৈরতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধুর দল ও তাঁর সরকার তাঁকে বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্বাধীনতার পরে জাতীয় সরকার গঠন করা হলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হতো না। আওয়ামী লীগকে দোষারোপের বাইরে গিয়ে সত্য উদ্‌ঘাটন করার আহ্বান জানান রব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ নেতা বলেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এককভাবে কর্মসূচি দিয়ে স্বৈরাচারের আয়ু বৃদ্ধি হচ্ছে বলে জানান।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানান। এবার ১৫ আগস্ট শোক দিবসের দিনে তাঁকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজ দলের সরে যাওয়ার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে তারেক রহমানকে নেতা বানানোর রাজনীতি তিনি করেন না। এ সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে জানান কাদের সিদ্দিকী।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী প্রমুখ।