চুরির অভিযোগে ছাত্রাবাসে নির্যাতন, তরুণের মৃত্যু

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে চুরির অভিযোগে দিপু (২২) নামের এক তরুণকে পিটিয়ে এবং সুচালো যন্ত্র দিয়ে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারায় অবস্থিত কলেজের ছাত্রাবাসের প্রধান ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিপু বাসচালকের সহকারীর কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকার চায়না মোড়ে। কয়েক বছর আগে তাঁর বাবা মারা যান। মা থাকেন জামালপুর জেলায়। শহরের কৃষ্টপুর এলাকার ভাড়া বাড়িতে দিপুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা বলে তিনি ওই এলাকায় তাঁর নানির বাসায় প্রায় দিনই থাকতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিপু দিনে সময়ের অভাবে বেশির ভাগ সময় রাতে গোসল করতেন। সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে দিপু ওই ছাত্রাবাসের পুকুরে গোসল করতে যান। এ সময় ভবনের দ্বিতীয় তলার শিক্ষার্থীরা চুরি করতে যাওয়ার অভিযোগ এনে তাঁকে ধরে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা রাতভর দিপুকে পিটিয়ে ও সুচালো যন্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেন। ভোরে দিপুর অবস্থা খারাপ হওয়ায় ছাত্রাবাস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে খবর দেয়। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সকাল ১০টার দিকে দিপু মারা যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীর কয়েকজন জানান, ভোরে ছাত্রাবাসের মসজিদে নামাজ পড়ে হাঁটার সময় অনেকেই ছাত্রাবাসের প্রধান ভবনের দোতলা থেকে দিপুর আর্তনাদ শুনতে পান। আর্তনাদ শুনে এক ব্যক্তি কৌতূহলী হয়ে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখেন। ওই ব্যক্তি জানান, ভোর আনুমানিক ছয়টার দিকে ছাত্রাবাসের কয়েকজন ছাত্র আহত দিপুকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেন।
দুপুরে দিপুর মৃত্যুর খবর শুনে কৃষ্টপুর এলাকার বাসিন্দারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় কৃষ্টপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও অনেকবার ওই ছাত্রাবাসে চুরির অভিযোগে স্থানীয় তরুণদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি করলে চোরকে পুলিশে না দিয়ে কেন ছাত্ররা মারল, তাঁরা এর বিচার চান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিপুর মুখ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সুচালো যন্ত্রের আঘাতের অসংখ্য দাগ দেখতে পেয়েছেন তাঁরা।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে ওই ছাত্রবাসের সুপার ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. ওয়াসিম বলেন, তিনি শেষ রাতে খবর পান ছাত্রাবাসের বাইরে একটা চোরকে এলাকাবাসী তাড়া করলে সে কৃষ্টপুর এলাকা দিয়ে সীমানাপ্রাচীর টপকে ছাত্রাবাসে ঢোকে। চোরকে তাড়া করা কয়েজন স্থানীয় বাসিন্দাও সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকে। পরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা গণপিটুনি দিলে দিপুর অবস্থা খারাপ হয়। এই খবর পেয়ে তিনি পুলিশকে মুঠোফোনে খবর দেন।
বিকেলে ওই ছাত্রাবাসের প্রধান ভবনে খবর সংগ্রহ করতে গেলে ফটকের সামনে দুজন শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং ঢুকতে বাধা দেন। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ছাত্রাবাসে কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকলে কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো কোনো অভিযোগ করেনি।