মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলে ভূমিদস্যুকে সহযোগিতা করেন ইব্রাহিম

মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান
মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান

লালবাগ বিভাগের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলে ভূমিদস্যুদের সহযোগিতার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছিল পুলিশের তদন্ত কমিটি।

এরপরই আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সাময়িক বরখাস্তের চিঠি ইস্যু করে।

জমিটি বেদখল হওয়া সম্পর্কে গত বছরের ১ অক্টোবর ঢাকা জেলা প্রশাসন পুলিশকে জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কমিটি গঠন করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম), অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (কমিউনিটি পুলিশিং অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স) এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ডিএমপি সমন্বিত একটি কমিটি উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ), সহকারী পুলিশ কমিশনার (চকবাজার জোন), ডিএমপি, অফিসার ইন চার্জসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য এবং মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই কমিটির একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিদস্যু মো. জাবেদ উদ্দিন শেখকে পরোক্ষ সহযোগিতা করেছেন উপকমিশনার ইব্রাহিম খান।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী যে জমিটি বেদখল হয়ে যায়, সেটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শামসুল হক খানের মা মাসুদা খানমের নামে বরাদ্দ হয়েছিল। শামসুল হক খান মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহের কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই শহীদ পরিবারটিকে বংশালে ২২১ নম্বর নবাবপুর রোডে পাঁচ কাঠার প্লটটি দিয়েছিলেন। প্রতিবছর লিজ নবায়ন করে ওই জমিটি ভোগদখল করছিলেন শহীদ শামসুল হকের ভাই ফজলুল হক খান ও মো. আজহারুল হক খান।

ভুক্তভোগীরা কমিটিকে বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে মো. জাবেদ উদ্দিন শেখের নেতৃত্বে ৩০–৩৫ জন বংশালের ওই জমিতে ঢুকে পড়েন। তাঁরা সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধা কে এম শহীদুল্লাহ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে পরদিন বিকেল চারটা পর্যন্ত আটকে রাখেন। এরপর ওই জমির ওপর গড়ে ওঠা মাসুদা করপোরেশনের ব্যবস্থাপক কে এম শহীদুল্লাহ এবং পরিবারের সদস্যদের জোর করে বের করে দেয়। তাঁরা পাঁচ কোটি টাকার মালামালও লুট করে নিয়ে যান। জমির ওপর যে তিনতলা ভবন আছে, সেটি ভেঙে নতুন বেসমেন্টের কাজ শুরু করে। এ ঘটনায় ভোগদখলকারী শামসুল হাসান খান ২৯ সেপ্টেম্বর বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপকমিশনারের সঙ্গে দেখাও করেন।

তদন্ত কমিটি বলেছে, যে ধারায় মামলাটি রুজু করার কথা, ইব্রাহিম খান সে ধারায় মামলাটি করার নির্দেশনা দেননি। মামলাটি আমলযোগ্য অপরাধ ছিল। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাজ ছিল দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন, লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং আইনগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যকীয় কর্তব্য ছিল। সেটি না করে ইব্রাহিম খান সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা আছে, এ অজুহাত দাঁড় করান। তিনি প্রয়োজনীয় পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণে অহেতুক দেরি করেছেন। এতে সাধারণ মানুষের মনে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে কমিটিকে অসত্য তথ্য দেওয়ারও প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর ভ্রমণ বিবরণীতে লিখেছেন, তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত মামলার তদারকি করেছেন বলে উল্লেখ করেন। যদিও ভুক্তভোগীরা মামলাই করেন ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১০টায়। এমনকি চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তখনো ওই জমিতে ভূমিদস্যুদের নির্মাণ চলছে। এ নিয়ে ইব্রাহিম খানের জবাব সন্তোষজনক ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।