নারী-শিশুর অধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগ সংবেদনশীল: প্রধান বিচারপতি

‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতাকে বিশ্বব্যাপী সমস্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বর্তমান সমাজে নারী ও শিশু পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংবেদনশীল।’

সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনার তিনি এসব কথা বলেন। এই সেমিনার আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান ল’ইয়ার্স ফোরাম।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংবেদনশীল। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের রায় আছে। নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন বন্ধে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাজ হবে না, যদি–না নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন সমূলে বন্ধ হচ্ছে। এটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে।’

নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর প্রতিদিনই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে জানিয়ে বিচারপতি নাঈমা হায়দার সেমিনারে বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবারের সদস্য ও পরিচিত লোকজনের হাতেই নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও বহু নারী নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন না।

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচারে বিদ্যমান আইন, নির্যাতন বন্ধে উচ্চ আদালতের নজির তুলে ধরেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুদের শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে অবমাননাকর ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে উচ্চ আদালতের একাধিক রায় রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

ভুক্তভোগী নারীদের অনেকে আপত্তিকর জেরার সম্মুখীন হন জানিয়ে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মামলাগুলোর ভালো তদন্ত, ভালো প্রসিকিউশন ব্যবস্থা জরুরি। দরকার সমন্বয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম আমিনউদ্দিন। সেমিনারে তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় অপরাধীর শাস্তি হলে অন্য অপরাধীরা সতর্ক হবে। সমাজের কাছে একটি বার্তা যাবে যে অপরাধ করলে রেহাই নেই।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বশির আহমেদ, মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনজীবী আবদুন নুর দুলাল, শাহ মঞ্জুরুল হক, শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী চিতরাঞ্জলি নেগি।