৪৩ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র

ছুরি
ছুরি

কুমিল্লার আদালতে বিচারকের খাসকামরায় মো. ফারুক নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় গতকাল সোমবার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার ৪০ দিনের মধ্যে দেওয়া এই অভিযোগপত্রে মামলার একমাত্র আসামি মো. হাসানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক প্রদীপ মণ্ডল গতকাল বিকেলে কুমিল্লার আদালতের ১ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জালাল উদ্দিনের আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই বেলা ১১টায় কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে দৈনন্দিন কার্যক্রম চলছিল। ভবনের  তৃতীয় তলার ৩০৩ নম্বর কক্ষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস নিজের এজলাস বসেন। ওই আদালতে হাজিরা দিতে আসেন মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের আবদুল করিম হত্যা মামলার দুই আসামি। তাঁরা হলেন লাকসামের ভোজপুর গ্রামের শহিদুল্লাহর ছেলে মো. হাসান এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের অহিদুল্লাহর ছেলে মো. ফারুক। মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসামি হাসান তাঁর সহযোগী ফারুককে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে তিনি প্রকাশ্য আদালতের ভেতরেই ফারুককে ছুরিকাঘাত করেন। আত্মরক্ষার্থে ফারুক বিচারকের খাসকামরায় ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত  করেন হাসান। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন। 

হাসানকে রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) ফিরোজ আহম্মেদ। তিনি বাদী হয়ে ওই দিন রাতে হাসানকে একমাত্র আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, মামলাটি ডিবিতে আসার পর তাঁরা তদন্ত শুরু করেন। ঘটনার ৪৩ দিনের মধ্যে তাঁরা অভিযোগপত্র জমা দিতে পেরেছেন।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুন হন মনোহরগঞ্জের কান্দি গ্রামের আবদুল করিম। এ ঘটনায় আবদুল করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী সাফিয়া বেগম বাদী হয়ে ফারুক, হাসানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মনোহরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় হাসান ও তাঁর অপর দুই ভাই মিজান ও নুরুজ্জামানকে আসামি করা হয়। এ মামলায় হাসান ও তাঁর দুই ভাইকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে ফারুক ও মামলার বাদীর পরিবারের সঙ্গে পরে মারামারি হয়। এ ছাড়া ফারুকের বাবা অহিদুল্লাহ এ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পলাতক থাকায় মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় বলে হাসানের ধারণা। সেই ক্ষোভ থেকে হাসান হাজিরা দিতে আসার সময় ধারালো ছুরি সঙ্গে নিয়ে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ফারুককে হত্যা করেন তিনি।

কুমিল্লার আদালতের পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ড হাসান একাই ঘটিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর কেউ জড়িত নন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।