ভাঙাচোরা সড়ক, ভোগান্তি চরমে

গর্তে ভরা মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলছে মানুষ। সম্প্রতি শমশেরনগরের মরাজানের পার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
গর্তে ভরা মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলছে মানুষ। সম্প্রতি শমশেরনগরের মরাজানের পার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চার বছর ধরে এই অবস্থা চলায় গর্তগুলো এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়ক নিয়ে নানা অভিযোগ ও মেরামতের দাবি জানানো হলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে থাকা সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই নাজুক। সড়ক ভালো থাকলে ৩০ মিনিটে এই দূরত্ব পাড়ি দেওয়া যেত। এখন ভাঙাচোরা সড়কে দেড় ঘণ্টায়ও গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে সড়কে যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে তৈরি হয়েছে অনেক খানাখন্দ। বৃষ্টি হলেই সড়কের এসব খানাখন্দে পানি জমে। এসব খানাখন্দে যানবাহন পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুই বছর ধরেই ইট-সুরকি দিয়ে গর্তগুলো ভরাটের চেষ্টা চলছে। তবে বৃষ্টির কারণে ও অত্যধিক যানবাহনের চাপে সড়ক থেকে ইট-সুরকি সরে যাচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এই সড়কের চাতলা স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় পণ্য ও মালামাল আমদানি–রপ্তানি করা হয়। তা ছাড়া এই সড়কে প্রতিদিন কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলা একাংশের হাজারো শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ জেলা সদরে অফিস-আদালত, পাসপোর্ট অফিস, চা–বাগান ও হাসপাতালে আসা–যাওয়া করেন। সড়ক বেহাল হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি। নিরাপদে গাড়ি চালাতে চালকদের যেমন সতর্ক থাকতে হচ্ছে, তেমনি যাত্রীরা সারাক্ষণই থাকেন ঝাঁকুনির মধ্যে।

সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রতন দে ও বদরুল ইসলাম বলেন, এই সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে এখন গাড়ির নাম হয়েছে ‘ভাঙ গাড়ি’। যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণে নাম দিয়েছেন ‘রোগী বানানোর সড়ক’। গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল ও অসহনীয় দুর্ভোগ নিয়ে প্রায়ই যাত্রীরা অভিযোগ করেন। 

শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান ও নুরজাহান বলেন, ‘ভাঙা সড়কে বাড়তি ভাড়া, দ্বিগুণ সময়, ঝাঁকুনি ও কষ্ট যে কী পরিমাণ, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’

সওজ সূত্রে জানা যায়, মাস তিনেক আগে মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের বড় ধরনের সংস্কারকাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়, কিন্তু এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। এই সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন অংশে প্রথমে কাজ হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়কে যেসব বাজার রয়েছে, সেসব স্থানে কাজ হবে না। বাজার এলাকায় সড়কে পরবর্তী সময়ে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে শমশেরনগর থেকে চাতলাপুর মনু সেতু পর্যন্ত আরও ৮ কিলোমিটার সড়কে উন্নয়নকাজ হবে। অন্যদিকে যেসব স্থান বন্যায় তলিয়ে যায়, সেসব স্থানে এখন কাজ হচ্ছে না। সেসব স্থানে উঁচু করে পুনর্নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল সোমবার বলেন, আজই তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। তবে সড়কের খারাপ অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, সড়কের ২০ কিলোমিটার সংস্কারে দরপত্র অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন হয়ে গেলেই ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। এর কিছুদিন পর কাজ শুরু হওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।