প্রতিবন্ধিতাকে পায়ে ঠেলে সফল ব্যবসায়ী আফজাল

ব্যবস্থাপত্র দেখে ক্রেতাদের ব্যবস্থাপত্র দেখে ক্রেতাদের ওষুধ দিচ্ছেন আফজাল হোসেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো
ব্যবস্থাপত্র দেখে ক্রেতাদের ব্যবস্থাপত্র দেখে ক্রেতাদের ওষুধ দিচ্ছেন আফজাল হোসেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

বয়স একটু একটু করে বাড়ছিল। আফজাল হোসেন বুঝতে পারছিলেন নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কথা। চোখের সামনে ভেসে উঠছিল অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ। তার সঙ্গে যুক্ত হলো বাবার মৃত্যু। বয়স তখন ৯ বছরও পেরোয়নি। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা পায়ে ঠেলেছেন আফজাল। লেখাপড়া শিখে এখন সফল ব্যবসায়ী তিনি।

আফজাল হোসেনের (৩৪) বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাট্রাই গ্রামে। ওই গ্রামের প্রয়াত আবদুল লতিফের ছেলে তিনি। জন্মের পর থেকেই আফজালের দুই হাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ ছোট। হাতের আঙুলগুলোও বাঁকা। 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাট্রাই গ্রামের পাশেই কাঁঠালতলি বাজার। বাজারের এক পাশে একটি ওষুধের দোকান। নাম ‘মডার্ন ফার্মেসি’। দোকানটির মালিক আফজাল। দোকানে কাঠের তৈরি তাকে সাজিয়ে রাখা নানা ধরনের ওষুধ। বেশ বেচাকেনা চলছে। একটু পরপর ক্রেতারা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আসছেন। আফজাল তাক থেকে ওষুধ নামিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। টাকা গুনে গুনে ক্যাশবাক্সে ভরে রাখছেন। ওষুধের পাশাপাশি আফজাল মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রতিনিধি। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির মুঠোফোনে রিচার্জ করার সেবাও দেন। সব কাজ একাই সামলাচ্ছেন তিনি।

ব্যস্ততার ফাঁকে আলাপচারিতায় আফজাল নিজের জীবনের গল্প বলতে শুরু করলেন। বললেন, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা গেলেন। এরপর থেকেই মা-ই আমার সব। মা বলতেন, এত ভাবিস কেন? দেখিস, তুই সবার থেকে বড় হবি।’

 আফজালের সাহস আর অনুপ্রেরণা ছিল এটাই। সব সময়ই তাঁকে সামনে এগোনোর সাহস জুগিয়ে চলেছেন মা ফজিরুন বেগম। সঙ্গে রয়েছে বড় ভাইদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা।

আফজাল ২০০৬ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ মাদানীয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল (কামিলের সমমান) পাস করেন। এরপর কিছুদিন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ২০১০ সালে কাঁঠালতলি বাজারে এই ওষুধের দোকান দেন। মাসিক ভাড়া দুই হাজার টাকা। ব্যবসার জন্য পুঁজি দেন প্রবাসী দুই ভাই। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রতিদিন বিকেলে তাঁর দোকানে বসে রোগী দেখেন। আফজালের দোকানে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় হাজার টাকার শুধু ওষুধই বিক্রি হয়। বিকাশ ও মুঠোফোনে রিচার্জের মাধ্যমেও ভালো আয় করেন। তাই কেউ বাঁকা চোখে তাকানোর সাহস দেখান না। সব মিলিয়ে সুখী মানুষ তিনি।

এলাকার সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত আফজাল। মাদক ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচারণা, বৃক্ষরোপণ, খেলাধুলা—এমন ইতিবাচক সব কাজে অংশগ্রহণ রয়েছে তাঁর। বিভিন্ন সময়ে এসব কাজে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার কাজে নেতৃত্ব দেন তিনি।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রহমান বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে হার মানিয়েছেন আফজাল। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত। আমরা তাঁর জন্য গর্ববোধ করি।’