দুই নেতার বলয়ের বাইরে নেতৃত্বে আসার সুযোগ কম

এবার ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্ব ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। কিন্তু সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভোট নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে দুই ব্যক্তিকে নিয়ে। তাঁদের একজন গুম হওয়া বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী, আরেকজন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন। ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা বলছেন, ওই দুই নেতার বলয়ের বাইরে কারও পক্ষেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই।

ইলিয়াস আলী একসময় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হলেও ছাত্রদলে কখনো তাঁর প্রভাব কমেনি। গুম হওয়ার সাত বছর পরও তাঁর অনুসারী অংশটি ছাত্রদলে সক্রিয়। ছাত্রদলের অন্য বলয়টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনে বড় পদ পেতে গেলে সেটি ভোটে হোক কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে হোক, ওই দুটি বলয়ের বাইরে কিছু হওয়ার সুযোগ নেই।

নেতা-কর্মীরা জানান, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে তাঁর অনুসারী পক্ষটির নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা হাবীব–উন–নবী খান, শফিউল বারী, আবদুল কাদির ভূঁইয়া, সাইফুল ইসলাম, আজিজুল বারী ও আকরামুল হাসান। যদিও হাবীব–উন–নবী এবার সক্রিয় নন। নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই বলয় নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদি তালুকদারকে সংগঠনের সভাপতি পদে দেখতে আগ্রহী। অন্য পক্ষের পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান।

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কেউ কারও শত্রু নন, তবে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা আছে।

নেতা-কর্মীরা জানান, ইলিয়াস আলীর বাইরে এত দিন ছাত্রদলের অন্য বলয়ের নেতৃত্ব দিতেন ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান। নানা কারণে বিএনপিতে তাঁর প্রভাব আগের চেয়ে কমে যাওয়ায় এখন এই বলয়ের একচ্ছত্র নেতা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন। তাঁর অনুসারী পক্ষটি ছাত্রদলের সাবেক সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলমকে সভাপতি করতে চান। এই পদে তাঁদের দ্বিতীয় পছন্দে সংগঠনের সাবেক বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম।

তবে ছাত্রদলের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগে ছাত্রদলে ‘চ্যুজ অ্যান্ড পিকের’ ব্যাপার ছিল। কিন্তু এবার প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। যাঁরা গ্রুপিং বা বলয়ের কথা বলছেন, কিসের ভিত্তিতে বলছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।

>

১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন
সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হবে
সম্মেলনে কাউন্সিলর (ভোটার) ৫৮০ জন
সভাপতি পদে ২৭ জনের মনোনয়নপত্র জমা
সা. সম্পাদক পদে ৪৯ জনের মনোনয়নপত্র জমা
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ আগস্ট

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হবে। এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর (ভোটার) ৫৮০ জন। তাঁরা সারা দেশে সংগঠনের ১১৭টি ইউনিটের শীর্ষ পদে রয়েছেন। নির্বাচনে সভাপতি পদে ২৭ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৯ জনসহ মোট ৭৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ আগস্ট। যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৩ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণার সুযোগ থাকবে।

ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় এবার ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্ধারিত হতে যাচ্ছে,তাতে কোনো বলয় সৃষ্টি করে কারও প্রভাব রাখার সুযোগ নেই। স্বচ্ছতার সঙ্গে সব প্রার্থীর ব্যাপারে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের একাধিক সূত্র থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

ছাত্রদলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, নির্বাচনে যাঁরা কাউন্সিলর, তাঁরা সারা দেশের বিভিন্ন কমিটির নেতা। এসব কমিটি করেছে ছাত্রদলের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি। ওই কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান অনেক দিন কারাগারে থাকায় বেশির ভাগ কমিটি হয়েছে সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের ইচ্ছায়, তিনি আবার ইলিয়াস আলী বলয়ের অন্যতম নেতা। আবার ছাত্রদলের রাজনীতি শেষে অনেকেরই যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে আগ্রহী। যুবদলের প্রভাবশালী নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন। ফলে ভোটে তাঁর ইচ্ছা বা অনিচ্ছারও একটা প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকবে। সব মিলিয়ে দুই বলয়ের বাইরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসা কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ইকবাল হোসাইন বলেন, বলয়ের প্রভাব কিছুটা হয়তো থাকবেই, কিন্তু প্রার্থীরা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারলে তা কমে যাবে।

বিভিন্ন কমিটিতে ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এমন সাবেক নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, আগে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং সম্ভাবনা দেখে জ্যেষ্ঠ নেতারা যোগ্যদের ছাত্র নে​তৃত্বে তুলে আনতেন। এখন সেটি কমে গেছে। এখন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে যেতে হলে হয় বড় ভাই, নয়তো মূল দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ নেতাদের কারও না কারও বলয়ে যেতে হয়। নইলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত নামগুলো যাবে না।