'আমাকে সেনাপ্রধান ও জিয়াকে উপপ্রধান করে বঙ্গবন্ধু ভুল করেছিলেন'

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। ছবি: প্রথম আলো
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। ছবি: প্রথম আলো

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১–এর সভাপতি কে এম সফিউল্লাহ বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর মধ্য থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। আর আমি তখন ছিলাম সেনাপ্রধান। বঙ্গবন্ধু একটা মস্ত বড় ভুল করেছিলেন, সেটা হচ্ছে আমাকে সেনাপ্রধান করে আর জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান করে।’

আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ এসব কথা বলেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১।

১৯৭৩ সালের অক্টোবরে কে এম সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান ও জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করা হয়েছিল।

জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান করাটা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু সেনাপ্রধান হতে চাইনি। জেনারেল ওসমানী ৫ এপ্রিল ডেকে বললেন, “তুমি আর্মি টেক ওভার করো।” আমি বললাম, আমার সিনিয়র আছে। আমার তিনজন সিনিয়রের নাম বললাম। কর্নেল রব, দত্ত ও জিয়াউর রহমান। আমরা একই ব্যাচের হলেও জিয়াউর রহমান আমার চেয়ে ১ নম্বরের সিনিয়র ছিলেন। তখন আমি বললাম, এটা ঠিক হবে না। আমি বললাম, স্যার, এ সময়ে কী কাজটা করা ঠিক হবে? আমাদের মধ্যে তো একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত হোক আর যাহোক, এটা ঠিক হচ্ছে না।’

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘আমি জানি, অনেকেই বলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় আমি সেনাপ্রধান ছিলাম। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। আমার সে সময় সামর্থ্য ছিল না। কী করতে পারতাম। ওই সময়ে কিছু করার মতো আমাদের পজিশন ছিল না।’

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার জন্য যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তোলা হয়। সূক্ষ্মভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কোনো ব্যক্তির হত্যা নয়। স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু—সমার্থক। এ জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি এমন একজন নেতা, যিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন, সারা জাতিকে সেই স্বপ্ন দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় সেই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দুনিয়াতে আর কোনো বিপ্লবী এটা করতে পারেননি।’

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১–এর মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। অনেক ঘাতকের বিচার হয়েছে। কয়েকজন বিদেশে আছেন। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড শুধু নয়। এর পেছনে বাংলাদেশবিরোধী চক্রের হাত ছিল। হারুন হাবীব বলেন, শুধু বিচার করলেই হবে না। একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। এর পেছনের কুশীলব, ষড়যন্ত্রকারী যারা বেসামরিক, সামরিক এমনকি আওয়ামী লীগের যারা জড়িত ছিল, তাদের নাম ও পরিচয় নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. নুরুল আলম, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহসভাপতি আনোয়ার উল আলম, যুগ্ম মহাসচিব আবদুল মাবুদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল হাই প্রমুখ।