নৃগোষ্ঠীর মানুষদের বিতাড়নের চেষ্টা চলছে: সুলতানা কামাল

‘বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো
‘বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের ইচ্ছাকৃতভাবে দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা চলছে। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবেও চলছে আবার অ-রাষ্ট্রীয়ভাবেও চলছে। এখানে রাষ্ট্রের একটা প্রচ্ছন্ন মদদ আছে। আর মদদ আছে বলেই এই বিতাড়ন সম্ভব হচ্ছে।

‘বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সুলতানা কামাল। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার সকালে এ সেমিনার হয়। আয়োজক ছিল বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের জোট ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৯ উদ্‌যাপন কমিটি’।

গত ৯ আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক দিবস। এ উপলক্ষেই ছিল আজকের আয়োজন। এ বছর এ দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘আদিবাসী ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণ’।

আজ সুলতানা কামাল বলেন, দেশে নৃগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এই কমে যাওয়ার পেছনে প্রাকৃতিক কোনো কারণ নেই। আছে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্রীয় নীতির কারণেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা কমছে। এসব জাতির মানুষ দেশত্যাগ করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাদের সংখ্যা কমানোর প্রক্রিয়া চলছে। অথচ এই প্রবণতা রুখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।

সুলতানা কামাল বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে সাংবিধানিকভাবে এবং সার্বিকভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। এটা সুখকর সংবাদ না।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা আজ সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে উদ্বাস্তু করে তুলছি। এক সময় আমরা বিবেকের উদ্বাস্তুতে পরিণত হব। ’

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের অধিকার নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে, কী কারণে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে বা তারা উৎখাত হচ্ছে। দুটোই আইনবিরোধী। প্রশ্ন আসে, এসব জাতির মানুষের ভূমি সুরক্ষায় আইনে থাকা দায়িত্বগুলো জেলা প্রশাসন পালন করছে কি না।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ভূমি সংক্রান্ত সরকারি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের এ সংক্রান্ত জ্ঞান উন্নত করার দরকার আছে। ভূমি সংক্রান্ত নানা আইন আছে মানুষের সুরক্ষার জন্য। অথচ সেগুলো ব্যবহার হয় মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না—এমন কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। যে কেউ ইচ্ছে করলে এ শব্দ ব্যবহার করতে পারে।

আজকের সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ‘ভূমিই জীবন, ভূমিই পরিচয়, ভূমিই অস্তিত্বের প্রতীক’ শীর্ষক প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। আর ‘আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ: কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।

বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বেসরকারি সংগঠন নিজের করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ।