এইচএসসির উত্তরপত্র জালিয়াতি, ১৯ জনের বিরুদ্ধে বোর্ডের মামলা

২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের উত্তরপত্র জালিয়াতি করে ১৮ শিক্ষার্থীকে জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বরিশাল নগরের বিমানবন্দর থানায় ১৮ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনকে আসামি করে গতকাল সোমবার বিকেলে মামলা করেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল আজিম।

মামলায় ১৮ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অপর আসামি হলেন বরিশাল বোর্ডের উচ্চমান সহকারী (রেকর্ড সাপ্লায়ার) গোবিন্দ চন্দ্র পাল। উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ আগস্ট তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত ১৭ জুলাই এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ১৮ পরীক্ষার্থীর ফল স্থগিত রাখে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। উচ্চতর গণিত প্রথম পত্র বিষয়ে প্রধান পরীক্ষকের তৈরি করা উত্তরপত্রের সঙ্গে ওই ১৮ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র হুবহু মিলে যাওয়ায় তাঁদের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। পরে বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ওই ১৮টি উত্তরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল আজিমকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে দেখতে পায়, ওই ১৮টি উত্তরপত্রে বিশেষ চিহ্ন (ডান পাশে লাল কালির চিহ্ন) দেওয়া ছিল। উত্তরপত্র জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ওই ১৮ শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রথমে স্থগিত এবং পরে ৮ আগস্ট বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাঁদের ফলাফল বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে তিন বছরের জন্য তাঁদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ ও শাস্তির ৪২ নম্বর আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওই ১৮ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

ওই ১৮টি উত্তরপত্র নিরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবু সুফিয়ান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমি উত্তরপত্র নিরীক্ষণের কাজ করছি। উচ্চতর গণিতের ১৮টি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমার সন্দেহ হয়। সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনের পর বোর্ড থেকে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই ১৮টি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখি, বোর্ড থেকে যে উত্তর পাঠানো হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ওই উত্তরপত্রগুলোতে অঙ্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনের খাতায় ৫০ এ ৫০ দেওয়া ছিল। বাকি ৪ জনকে দেওয়া হয় ৪০। সন্দেহ হওয়ায় আমি বিষয়টি প্রধান পরীক্ষককে অবহিত করি। এরপর প্রধান পরীক্ষক বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে খাতাগুলো নিয়ে যান।’

উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় ১৮ আগস্ট গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে। বাকি দুই সদস্য হলেন শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মো. লিয়াকত হোসেন এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক অব্বাস উদ্দীন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়নি।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ও শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক লিয়াকত হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা–সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এখনো অনেকের সঙ্গে কথা বলা বাকি। এ জন্য প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।’

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ডের কর্মচারী গোবিন্দ পালসহ অভিযুক্ত ১৮ পরীক্ষার্থীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে বোর্ডের আরও অনেকে জড়িত রয়েছেন। সে কারণে এ মামলায় আসামির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য এবং এ সম্পর্কিত কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পেলে বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক গোপন তথ্য বের হয়ে এসেছে। তবে এখনো প্রতিবেদন জমা হয়নি। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার আগেই ফৌজদারি আইনে থানায় মামলা করা হয়েছে।