তিন দফা দাবিতে জাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল। ২৭ আগস্ট, মঙ্গলবার, রাত আটটা। ছবি: মাইদুল ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল। ২৭ আগস্ট, মঙ্গলবার, রাত আটটা। ছবি: মাইদুল ইসলাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে ‘অপরিকল্পিত’ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, বরাদ্দকৃত অর্থে অনিয়ম ও সাংবাদিক হেনস্তার প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস ও আবাসিক হল নির্মাণের স্থান পুনর্নির্ধারণের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে মশাল মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত রোববার থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে নানা কর্মসূচি অব্যাহত আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে রাত ৮টায় মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে কয়েকটি সড়ক ও উপাচার্যের বাসভবন ঘুরে পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক বলেন, ‘প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে দুই কোটি টাকা উপাচার্যের বাসায় ভাগ বাঁটোয়ারা করেছে ছাত্রলীগ—জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশের চার দিন পার হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, উল্টো তিনি সবাইকে নালিশ করে বেড়াচ্ছেন আমরা উন্নয়ন বিরোধী স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা উন্নয়ন বিরোধী না। আমরা চাই পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হোক। সকল ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’

এ সময় ৫ দিনের মধ্যে তিন দফা দাবি না মানলে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান।

মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল জব্বার হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক তারেক রেজা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক রায়হান রাইন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের চার শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত সোমবার রাতে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ‘স্বৈরাচার্যের মাস্টার প্ল্যান চ্যাট’ শীর্ষক ব্যঙ্গাত্মক বিতর্ক, কবিগান ও ‘পাবলিক টক’ এর আয়োজন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, মহাপরিকল্পনার নামে বিশাল দুর্নীতির মহাযজ্ঞে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হওয়া ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার প্রত্যেকটি পয়সার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চয়তা চাচ্ছে তারা।

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ। মঙ্গলবার বিকেলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়ের পক্ষে দপ্তর সম্পাদক ফয়জুর মেহেদী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ সংহতি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া এই প্রকল্প থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়েছে—এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য দুজন সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। বিবৃতিতে সংগঠনটি প্রশাসনের এমন আচরণের প্রতিবাদে করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানায়।