'বাবা কেন বাসায় আসছে না'

মো. মিলন
মো. মিলন

বিকেলের দিকে বাসায় এসেছিলেন কয়েকজন প্রতিবেশী। তাঁরা শিল্পী বেগমকে কী সান্ত্বনা দেবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। শিল্পীর কোলে বসা ছিল তাঁর ছোট মেয়ে। সে কিছুক্ষণ পরপরই জানতে চাচ্ছিল, তার বাবা কেন বাসায় আসছেন না।

শিল্পী বলছিলেন, ‘মিলন আর ফিরবে না, এটা ছেলেটাকে বোঝাতে পারলেও মেয়েটাকে বোঝাতে পারছি না। বাবা আসবে না, এই কথা শুনে গতকাল (সোমবার) থেকে খাওয়া বন্ধ করছে সে।’

রাজধানীর মিরপুরের গুদারাঘাট এলাকায় স্ত্রী আর ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন মো. মিলন। অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন তিনি। গত রোববার রাতে মালিবাগ থেকে উড়ালসড়ক হয়ে শান্তিনগরে যাচ্ছিলেন। পথেই দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। উড়ালসড়কে ওঠার পরপরই মিলনের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। রক্তের বেগ থামাতে তিনি নিজেই গলার ডান পাশের অংশ ডান হাত দিয়ে চেপে ধরেন। ওই অবস্থায় দৌড়ে উড়ালসড়ক দিয়ে নেমে আসেন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাঁকে। মিলনের মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন সেটটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

গত সোমবার রাতেই মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় মিলনকে। এদিকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু জানাতে চায়নি পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক আতিকুর রহমান রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতই সব জানানো হবে।

দুই বছর আগে মিরপুর কমার্স কলেজের এক অধ্যাপকের গাড়ির চালক ছিলেন মিলন। বেতন কম হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর নিজেও অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন দীর্ঘদিন। এই সময়টাতে মিলনের ওষুধের টাকা, সংসার আর ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চলত আত্মীয়স্বজনদের কাছে থেকে নেওয়া ধারের টাকায়।

শিল্পী বলছিলেন, দুই লাখ টাকার মতো ঋণ আছে মিলনের। মাসে পাঁচ হাজার টাকার কিস্তি দিতে হয় একটি প্রতিষ্ঠানকে। মোটরসাইকেল চালিয়ে পাওয়া টাকাতেই সংসার চলত। এখন এসব শোধ করা হবে কীভাবে!

মিলনের সঙ্গেই অ্যাপভিত্তিক সিএনজি চালাতেন তাঁর বন্ধু ও প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, ঈদের মধ্যে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কিছুদিন আয় কমে গিয়েছিল মিলনের। সে জন্য ঈদের পর থেকে রাতেও যাত্রী আনা-নেওয়া শুরু করেন। মিলন চাইছিলেন ধারের টাকাগুলো দ্রুত শোধ করে স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভালোভাবে থাকতে। কিন্তু সেই ভালো আর থাকা হলো না।