ম্যাজিস্ট্রেটকে আটকে পাঁচজনকে ছিনিয়ে নেওয়া আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটকে আটকে রেখে পাঁচজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতা মোস্তফা সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

নড়িয়া থানায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেন উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের পেশকার শাকিলুর রহমান। এ মামলায় মোস্তফা সিকদারের ভাই সুমন সিকদার, শ্রমিক আনসার মাঝি এবং অজ্ঞাতনামা ৪০-৪৫ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ মোস্তফার ভাই সুমন সিকদারকে আটক করেছে। মোস্তফা সিকদার পলাতক। সুমন সিকদারকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মোস্তফা সিকদার আগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ করেন, কিন্তু মোস্তফা সিকদারের এখন কোনো পদে নেই।

নড়িয়া থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, পূর্ব নড়িয়া এলাকায় পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুজ্জামান সেখানে যান। এ সময় সেখান থেকে একটি খননযন্ত্র জব্দ করেন এবং বালু উত্তোলনে জড়িত আটজনকে আটক করেন। ট্রলারে করে আটক আটজনকে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দলটি বেলা আড়াইটার দিকে নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছায়। প্রশাসনের লোকজনের গাড়িগুলো সেখানে রাখা ছিল। এ সময় মোস্তফা সিকদার ও তাঁর ভাই সুমন সিকদারের নেতৃত্বে তাঁদের সমর্থকেরা বিভিন্ন যানবাহন সামনে রেখে প্রশাসনের গাড়িগুলোর পথ আটকে দেন। এভাবে অবরুদ্ধ করে আটক আটজনের মধ্যে পাঁচজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আওয়ামী লীগের নেতা মোস্তফা সিকদারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে তিনি দৌড়ে পালান। সেখান থেকে তাঁর ভাই সুমন সিকদারকে আটক করে পুলিশ।

ওই ঘটনায় আটক মোস্তফা সিকদারের খননযন্ত্রের শ্রমিক আলী হোসেন খান (৩৬) ও কাশেম ফকিরকে (২৮) ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আলী হোসেন খান ও কাশেম ফকিরের স্বজনেরা অর্থদণ্ডের টাকা পরিশোধ করে তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

নড়িয়া আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ভাঙন ঠেকাতে নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ওই ঠিকাদারি কাজটি করছেন মোস্তফা সিকদার। তিনি ওই কাজে ব্যবহারের জন্য অবৈধভাবে পদ্মা থেকে বালু তুলছেন।

মোস্তফা সিকদার আজ বুধবার মোবাইলে বলেন, ‘আমি বালু উত্তোলন করছিলাম না। কেউ হয়তো এ কাজ করে আমার নাম ব্যবহার করেছিল। আর আটক ব্যক্তিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গেও আমি যুক্ত নই। ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনারের সঙ্গে একটি জমি মিউটিশন নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভুল-বোঝাবুঝি ছিল। এ কারণে তিনি এ সুযোগে আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা করেছেন।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘নড়িয়ায় পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন করার সময় একটি খননযন্ত্র জব্দ করি। এ কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটজনকে আটক করি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা সিকদার ওই খননযন্ত্র ও আটক ব্যক্তিদের ছিনিয়ে নেয়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।’

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।