রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির ১০ দফা

রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বিএনপি। লেক শোর হোটেল, ঢাকা, ২৮ আগস্ট। ছবি: ফোকাস বাংলা
রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বিএনপি। লেক শোর হোটেল, ঢাকা, ২৮ আগস্ট। ছবি: ফোকাস বাংলা

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সরকারকে ফের জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ১০ দফা সুপারিশ দিয়েছে বিএনপি। বুধবার বিকেলে রোহিঙ্গা সমস্যার ওপর এক গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান।

গুলশানে লেক শোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা অংশ নেন।

বিএনপির ১০ দফা সুপারিশের মধ্যে আছে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজের মাতৃভূমিতে অবাধ চলাচল নিশ্চিতকরণ, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, প্রত্যাবাসনের আগে ও পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানের মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সুযোগ রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি না হতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রভৃতি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই, জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাই, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছাতে চাই। একই সঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে, জাতিসংঘকে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছি, মানবিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটাকে সমাধানের জন্য তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে। আমরা জানি, এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই, তারা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং তাদের বিশ্বজনমত তৈরি করতে হলে সমগ্র জনগণকে সামনে নিয়েই এই অভাবটা পূরণ করতে হবে।’

বিএনপির গোলটেবিল আলোচনায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, তুরস্ক, জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি দেশ ও সংগঠনের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কূটনীতিকেরা আলোচনায় কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁরা আলোচকদের বক্তব্য নোট করেছেন।

আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রেক্ষাপট, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতিবেদন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব এ এইচ এম মোফাজ্জল করীম, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া গোলটেবিলে বক্তব্য দেন।

‘ওবায়দুল কাদের বক্তব্য সুইসাইডাল’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার পুরোনো খেলা শুরু করেছেন, বিএনপিকে দায়ী করতে শুরু করেছেন এবং তিনি আমাকে দায়ী করেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে নাকি আমরা উসকে দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের। এটা সুইসাইডাল, এটা আত্মহননের কথা। আমরা মনে করি, এই ধরনের কথাবার্তা শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, মিয়ানমারকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সমস্যা আরও বৃদ্ধি করবে।’

ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের জন্য সত্যিকার অর্থে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে না। প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম, একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের করতে হবে।’ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসার সময় খালেদা জিয়া যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাধীনতা, বাড়ি-ঘর-সম্পত্তির ফিরিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি চায়—এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। এ জন্য দেশে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বন্ধু বৃদ্ধি করে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় গোলটেবিল আলোচনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।