'টাকা নয়, বিচার চাই'

রাজধানীর বাংলামোটরে গত মঙ্গলবার বিকেলে বাসচাপায় পা হারিয়েছেন কৃষ্ণা রায় চৌধুরী। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গতকাল বেলা তিনটায় পঙ্গু হাসপাতালে।  ছবি: জাহিদুল করিম
রাজধানীর বাংলামোটরে গত মঙ্গলবার বিকেলে বাসচাপায় পা হারিয়েছেন কৃষ্ণা রায় চৌধুরী। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গতকাল বেলা তিনটায় পঙ্গু হাসপাতালে। ছবি: জাহিদুল করিম

পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক কৃষ্ণা রায় চৌধুরী (৫৫)। বাঁ পা ব্যান্ডেজে মোড়া। বাসের চাপায় আহত হওয়ার পর চিকিৎসকেরা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি।
মায়ের এই অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন ছেলে কৌশিক চৌধুরী। ভেজা চোখে মাকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। স্বজন, প্রতিবেশীরাও চারপাশে। তাঁরাও নানাভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পাশে দাঁড়াতেই কৌশিক চৌধুরী বললেন, ‘ভাই, আপনারা কিছু করেন, আমরা টাকা নয়, ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের মালিক–চালকের বিচার চাই।’

কৌশিক চৌধুরী বললেন, ‘মঙ্গলবার রাতে বাস কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এসেছিল। তারা মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে। দুই লাখ টাকাও দিতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, টাকা নয়, আমি আমার মায়ের পা হারানোর সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার মা রাস্তাও পার হচ্ছিলেন না। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলেন। চালক মায়ের ওপর বাস তুলে দিল।’

এ সময় পাশে দাঁড়ানো এক স্বজন জানালেন, মঙ্গলবার রাতে মাথায় সিটি স্ক্যান করাতে কৃষ্ণা রায়কে পাশের নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছিল। সিটি স্ক্যান প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসকেরা বলেছেন, মাথায় আঘাত পেলেও কোনো সমস্যা হয়নি।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল গণি মোল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, কৃষ্ণা রায়কে বুধবার সকালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এখনো তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তাঁর কাটা পায়ে দুদিন পরপর ড্রেসিং করতে হবে। কোনো ধরনের সংক্রমণ না হলে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে মামলা
বাস চাপা দেওয়ার ঘটনায় গতকাল বিকেলে কৃষ্ণা রায়ের স্বামী রাধে শ্যাম চৌধুরী বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কৃষ্ণা রায় চৌধুরীকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে ট্রান্স ট্রান্সপোর্টের মালিক, চালক ও তাঁর সহকারীর বিরুদ্ধে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ঘটনার সময় বাসটি চালাচ্ছিলেন অনিয়মিত চালক মোরশেদ আলম। নিয়মিত চালক না থাকায় তাঁকে দিয়ে চালানো হচ্ছিল। মোরশেদকে গ্রেপ্তার করা হলে লাইসেন্স ছিল কি না, তা জানা যাবে। তিনি জানান, বাসটি ক্যান্টনমেন্ট হয়ে মতিঝিল রুটে চলত। এর আগে দুবার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো ও পার্ক করার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

বাসের নিবন্ধন বাতিল
গতকাল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো সার্কেল ১ (মিরপুর ১৩)–এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাংগ্স মোটরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলা হয়, র‍্যাংগ্‌স মোটরস লিমিটেডের মালিকানাধীন (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৯১৪৫) বাসটি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে একজন পথচারীকে আহত করা হয়েছে। এর দায়ে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ধারা ৪৩ অনুযায়ী বাসটির নিবন্ধন সাময়িক বাতিল করা হলো। ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেসের অধীনে বাসটি চললেও এর সব কাগজপত্র র‍্যাংগ্‌স মোটরস লিমিটেডের নামে। ২৯ আগস্ট এই রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হবে। তবে নতুন করে কেউ রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেনি।