'তিন বাইষা গেইল, পুল হইল না'

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-জগতবের সড়কের দেওদাপাড়া গ্রামে খালের ওপরের সেতুটি দুই বছরেও সংস্কার করা হয়নি। গত মঙ্গলবার।   প্রথম আলো
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-জগতবের সড়কের দেওদাপাড়া গ্রামে খালের ওপরের সেতুটি দুই বছরেও সংস্কার করা হয়নি। গত মঙ্গলবার। প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-জগতবের সড়কের দেওদাপাড়া গ্রামে খালের ওপরের সেতুটি বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার দুই বছরেও সংস্কার করা হয়নি। এটির দুই পাশে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার। এটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলতে না পারায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

সেতুটির ওপর দিয়ে জগতবের ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়সহ উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। এটি সংস্কার না করায় এসব গ্রামের মানুষকে ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

দেওদাপাড়া গ্রামের আবুল মিয়া ও বাবুল হোসেন বলেন, ‘আগে দুই বাইষা (বর্ষা) পানিত গেইল। ফির বাইষা আসি গেইল। তা-ও পুল হইল না। এই ভাঙা সাঁকো আর ভাঙা পুল দিয়া হামাক চলবার লাগবে?’

জগতবের ইউপির চেয়ারম্যান নবিবর রহমান বলেন, ‘সেতুটি হওয়া খুবই জরুরি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। এটির নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানায়, জগতবের ইউনিয়নের দেওদাপাড়া গ্রামে ১৯৯২ সালের দিকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের আগস্টের বন্যায় সেতুটি বিধ্বস্ত হয়। এটির দুই পাশের মাটি সরে যায়। সেতুটির দুই পাশে সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন এলাকাবাসী। এখন সাঁকোও ভাঙা ও নড়বড়ে। এতে পারাপার হতে গিয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ভ্যানের চালকসহ ২৫ ব্যক্তি খালের পানিতে পড়ে আহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ওই খালের উত্তর পাশে জগতবের ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম রয়েছে। সেগুলো হলো পশ্চিম জগতবের, দেওদাপাড়া, সুধিরটারী, হেল্লাপাড়া, মেছপাড়া, ইছারটারী, কোম্মানিরটারী, এবাদত গণিরটারী, জলিলেরটারী, খাতাপাড়া, ২ নম্বর ভোটহাটখাতা, সফিউদ্দিনেরটারী ও মন্তাহাজীরটারী। খাল পার হয়ে তাঁদের দক্ষিণ দিকে উপজেলা সদরের হাটবাজার, ইউপির কার্যালয়, তিনটি প্রাথমিক ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। কৃষকদের কৃষিপণ্যসহ চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

জগতবের ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই ভাঙা সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ ২৫ জন পানিতে পড়ে আহত হয়েছেন। এর ওপর দিয়ে পণ্যবোঝাই গাড়ি পারাপার হয় না। এ-পার থেকে ও-পারে নিতে হলে মাথায় করে নিয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও পরিশ্রম বেশি হয়। সেটা করা সম্ভব না হলে অতিরিক্ত পথ ঘুরে যানবাহনে করে গ্রামের মানুষজনকে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে উপজেলার রসুলগঞ্জ হাটে নিয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, খালের ওপর সেতুটি কাত হয়ে আছে। সেতুটির দুই পাশের মাটি সরে গেছে। সেতুটির উত্তর পাশে বাঁশের চাটাই ও অন্য পাশে শুধু বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে।

এ সময় কলেজছাত্র আল-আমিন বলেন, গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলা সদরের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। সেতুটি নির্মাণ না করায় অনেক পথ ঘুরে স্কুল ও কলেজে যেতে হচ্ছে। প্রথম দিকে সাঁকোটি ভালোই ছিল। পরে সেটি নড়বড়ে ও ভেঙে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী পানিতে পড়ে যায়। ভয়ে কেউ স্কুলে যেতে চায় না।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মো. শামসুজ্জামান বলেন, সেতুটি তৈরির জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। সেটির অনুমোদন পেলে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।