সাবেক সাংসদ ওদুদ ও পরিবারের নামে সম্পত্তির প্রায় ৩০০ দলিল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের অনুসন্ধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (সদর) আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে সম্পত্তির প্রায় ৩০০টি দলিল পাওয়া গেছে। এসব দলিল ২০১৮ সালের আগে সম্পাদিত।

অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। আরও দলিল পাওয়া যেতে পারে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার মো. আলী আকবর। তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা এ অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।

আলী আকবর জানান, দুদকের নির্দেশে সাবেক সাংসদ আবদুল ওদুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পত্তির এ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। দুদক ১৯৯৬ থেকে জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাঁদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের তথ্য জানতে চেয়েছে। তাঁরা ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত সম্পাদিত দলিলের তথ্য এ পর্যন্ত জানতে পেরেছেন। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সদর সাবরেজিস্ট্রারের অফিসের অধীনে ২৭৪, শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার অফিসের অধীনে ১৪ ও নাচোল সাবরেজিস্ট্রারের অধীনে ২টি দলিলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সদর সাবরেজিস্ট্রারের অধীনে ২০১৮ সালে সম্পাদিত আরও দলিলের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। এসব দলিলে উল্লিখিত মূল্যমানসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য অনুসন্ধানে আরও সময় লাগবে। এ জন্য দুদকের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহী গত ২২ জুলাই জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠায়। তাতে জানুয়ারি ১৯৯৬ থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত আবদুল ওদুদ, তাঁর স্ত্রী মার্জিনা ওদুদ, মেয়ে নৌরীন ওদুদ, নাহালা ওদুদ ও ছেলে মো. শফিউল ইসলামের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়। দুদকের ওই চিঠিতে আবদুল ওদুদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, আবদুল ওদুদ ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল-জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওয়াক্‌ফকৃত ৮০ বিঘা জমিসহ টাকা আত্মসাৎ করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুল ওদুদের চাচাতো ভাই সদর আসনের সাংসদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক আবদুল ওদুদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পত্তির অনুসন্ধানে নেমেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল ওদুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ও বেনামে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে। 

উল্লেখ্য, জাল দলিল তৈরি করে আবদুল ওদুদ তাঁর ফুফুর জমি আত্মসাৎ করেছেন—এমন অভিযোগে গত ২৮ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন হারুনুর রশীদ। ওই মামলায় আবদুল ওদুদ, তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ালিউল্লাহসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়। ওই মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, আবদুল ওদুদ ও বাদীর ফুফু গোলেনুর বেগম নিঃসন্তান নারী। তিনি ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট থেকে সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে ১ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। অথচ ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বাদী জানতে পারেন তাঁদের ফুফু গোলেনুর বেগম চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হুজরাপুর মৌজার প্রায় ১০ শতক জমির ওপর একটি বাড়ি ও সদর থানার রানিহাটি মৌজার তিনটি দাগের ৭ বিঘা জমির হেবানামা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। এ দলিলের গ্রহীতা হিসেবে আবদুল ওদুদ, তাঁর নাবালক ছেলে মো. নাফিউল, ওদুদের চাচাতো ভাই ওয়ালিউল্লাহ, বাদীর (হারুনুর রশীদ) বোন মোমতাজ মহল ও হারুনুর রশীদকে দেখানো হয়েছে। দলিলের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্যই দলিলের গ্রহীতা করা হয়েছে বাদী ও বাদীর বোনকে। পরে আবদুল ওদুদ তাঁর নাবালক ছেলের অংশ অন্য দলিলমূলে অন্যত্র হস্তান্তর করেছেন। এ মামলাটি এখন বিচারাধীন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল ওদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৈতৃক সূত্রে আমি অনেক জমি পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক ভাইয়ের জমিজমাও আমমোক্তারনামা সূত্রে দেখাশোনা করি। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে নির্বাচনের জন্য বহু জমি বিক্রি করেছি। এ ছাড়া ব্যবসা করার জন্য বহু জমি কেনাবেচা করেছি। এ জন্য জমি কেনাবেচার বহু দলিল হয়ে থাকতে পারে। তবে সংখ্যা আমার মনে নেই। শুনেছি, হারুনুর রশীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এসব তদন্ত করছে। তবে আমি দুর্নীতির মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করিনি।’