নদীর চেয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য কম

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতু। গত সোমবার তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতু। গত সোমবার তোলা। ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার মানুষের প্রাণ হিসেবে পরিচিত প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা নদীর ওপরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পৃথক স্থানে দুটি সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছে। তবে ওই দুটি স্থানে সেতুর দৈর্ঘ্যের চেয়ে নদীর প্রশস্ততা বেশি। এ কারণে এসব সেতু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সওজ বিভাগ চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কে বড়বাজার-দৌলাতদিয়াড় পয়েন্টে ১৪০ মিটার এবং এলজিইডি দামুড়হুদা-কার্পাসডাঙ্গা সড়কে উপজেলা শহর ও দেউলী মোড় পয়েন্টে ৯৬ দশমিক ১ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু দুটি তৈরি করছে। যার প্রথমটি মেহেরপুরের ঠিকাদার জহিরুল ইসলাম এবং শেষেরটি চুয়াডাঙ্গার মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও মেসার্স মাদানী এন্টারপ্রাইজ (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) তৈরি করছে। 

গত রোববার জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী রফিকুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘দামুড়হুদায় এলজিইডির অর্থায়নে যে সেতু তৈরি করছে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সেতুটি যথাযথ নকশা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।’

সেতুটি তৈরিতে নকশায় কোনো ত্রুটি আছে কি না এবং নদী কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপ্তিময়ী জামানকে নির্দেশ দেন।

তবে মাথাভাঙ্গা নদীর প্রশস্ততার তুলনায় সেতু দুটির দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় জেলা প্রশাসক নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দুই দিকে জায়গা ফাঁকা রেখে নদীর বুকে স্প্যান তৈরির ফলে পলি জমে প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং নদীপাড়ের মানুষকে দীর্ঘদিন কুফল ভোগ করতে হবে।’

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা-কার্পাসডাঙ্গা সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু তৈরির জন্য এলজিইডি ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫ টাকা বরাদ্দ রাখে। অনলাইন দরপত্রে চুয়াডাঙ্গার মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও মেসার্স মাদানী এন্টারপ্রাইজ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৭ কোটি ১ লাখ ৩ হাজার ৫২৯ টাকায় কাজটি পায়।

এলজিইডি চুয়াডাঙ্গার পক্ষে নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ও মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও মেসার্স মাদানী এন্টারপ্রাইজের (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) পক্ষে ইকবাল মাহমুদ গত ১৯ মার্চ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের ২২ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯৬ দশমিক ১ মিটার এবং প্রশস্ত ৯ দশমিক ৮ মিটার (উভয় পাশে এক মিটার চওড়া ফুটপাতসহ)। ৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি স্প্যানের ওপর পিএসসি গার্ডারের এই সেতু নির্মাণ হচ্ছে।

গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর ৪৪টি পাইলিং ও দামুড়হুদা শহর প্রান্তে অ্যাবার্টমেন্টের ক্যাপ পর্যন্ত ঢালায় সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে মাত্র তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকেরা সেতুতে কাজ করছেন। ঈদের ছুটির পর আজ (বুধবার) থেকে তাঁরা পুনরায় কাজ শুরু করবেন। 

কাজটির তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী খালিদ হোসেনের ভাষ্য সেতুটির ৪০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বাকি কাজ শেষ হবে।

এলজিইডি চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, এলজিইডির নকশাবিদদের নকশা অনুযায়ী নিয়ম মেনেই দামুড়হুদার সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। ঠিকাদার ইকবাল মাহমুদও একই দাবি করেন।