যেখানে পাঠদান চলে সিঁড়ি ও বারান্দায়

শ্রেণিকক্ষসংকটে পাঠদান চলছে বারান্দায়। গতকাল দুপুরে নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  প্রথম আলো
শ্রেণিকক্ষসংকটে পাঠদান চলছে বারান্দায়। গতকাল দুপুরে নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম আলো

শ্রেণিকক্ষ মাত্র একটি হওয়ায় সিঁড়ি ও বারান্দায় চলছে নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। বিদ্যালয়ে নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। অল্প বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে থাকে। এককথায় বিদ্যালয়টিতে পাঠদানের ন্যূনতম পরিবেশও নেই। তারপরও থেমে নেই শিক্ষা কার্যক্রম। যার কারণে সফল্যও এসেছে। গত আট বছর সমাপনি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের রেকর্ড রয়েছে বিদ্যালয়টির।

গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের ওই বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি ভবন। দুটোই দ্বিতল। নিচতলা ফাঁকা, ওপরে শ্রেণিকক্ষ। এর মধ্যে একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে পাঠদান করা হয় না। অন্য ভবনটিতে কক্ষ মাত্র দুটি। একটিতে শিক্ষকেরা বসেন। আর অন্যটি শ্রেণিকক্ষ। 

শিক্ষকেরা জানান, ওই একটি মাত্র কক্ষই এখন বিদ্যালয়ের ছয়টি শ্রেণির ২২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ। উপায়ন্তর না দেখে পাঁচটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় কক্ষের সামনের বারান্দায়, দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি ও ছাদের সিঁড়ির কক্ষে। এতে পাঠদান দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো বসানোও যায় না বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা। 

বিদ্যালয়ের আঙিনা ঘুরে দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীর নেই। মাঠ নিচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। মাঠে কাদা থাকায় শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন সমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) করানো যায় না। সমাবেশ হয় ভবনের নিচের ফাঁকা জায়গায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ের নলকূপটি অকেজো হওয়ায় তারা পিপাসা পেলে পানি খেতে পারে না। আশপাশের বাড়িতে গিয়ে পানি পান করতে হয়।

সিঁড়িতেও চলে পাঠদান। গতকাল দুপুরে।
সিঁড়িতেও চলে পাঠদান। গতকাল দুপুরে।

দেখা যায়, বিদ্যালয়ের যে ভবনটিতে বর্তমানে পাঠদান করা হয় সেটির অবস্থাও খুব ভালো নয়। ২০১৫ সালে নির্মাণ করা ওই ভবনের অফিস কক্ষের ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। নিচতলার মেঝের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে। ওপরে ওঠার সিঁড়ির আস্তর খসে পড়ছে। দ্বিতীয় তলার মেঝেও ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দরজা-জানালাগুলো নড়বড়ে নিম্নমানের। 

সিঁড়িতে বসে গণিতের ক্লাসের পাঠ নিচ্ছিল তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিনা আক্তার, নাজমুন নাহার ও রায়হানা বিনতে শাহেদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বোর্ডে শিক্ষক অঙ্ক লিখে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তারা তা খাতায় তুলতে পারছে না। কারণ, সিঁড়িতে বসায় সামনে কোনো বেঞ্চ নেই। এভাবে প্রতিদিনই তাদের পাঠ নিতে হয় বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

পাঠদানরত শিক্ষক সাবিনা আক্তার এ সময় বলেন, বারান্দায় ও সিঁড়িতে শিক্ষার্থীদের বসানোর কারণে পাঠদানের ন্যূনতম পরিবেশও নেই। আবার পাশাপাশি দুটি শ্রেণির পাঠদান করায় শিক্ষার্থীরা শুধু নয়, তাঁরাও মনযোগ ঠিক রাখতে পারেন না। চিৎকার করে করে পাঠদান করাতে গিয়ে অল্পতেই তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

প্রধান শিক্ষক শামীম আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১১ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ দেখে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান। পরে ২০১৫ সালে দুই কক্ষের একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনের দুটি কক্ষের একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর অন্যটিতে পাঠদান করা হয়। 

তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই এত দিন বাকি পাঁচটি শ্রেণির পাঠদান করাতেন। কিন্তু একের পর এক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়তে দেখে গত ১৮ জুন থেকে ওই ভবনে পাঠদান বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ নিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। 

শামীম আরা বেগম বলেন, পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে দিয়েছেন এবং বারবার গিয়ে দেখা করেছেন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। 

জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম  বলেন, সিঁড়ি ও বারান্দায় পাঠদানের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি শিগগিরই বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাবেন।

অপরদিকে, সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (পিডিপি-৪) নতুন কাজ শুরু হবে। তখন ওই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়টির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।