ইয়াবা সেবন করতে চুরি

একুশ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন ওরফে মালিঙ্গা। সবাই তাঁকে স্পাইডারম্যান হিসেবে চেনে। কারণ স্পাইডারম্যানের মতো পাইপ বেয়ে আট–দশতলা ভবনে উঠে চুরি করে সহজে পালাতে পারেন তিনি। চুরি করা স্বর্ণালংকার, মুঠোফোন, ল্যাপটপ দেন এক বড় ভাইয়ের কাছে। বড় ভাই যে টাকা দেন সেই টাকায় সেবন করেন ইয়াবা। দিনে তাঁর আট থেকে দশটি ইয়াবা লাগে। আর ইয়াবা সেবনের জন্য তিন বছর ধরে চুরি করে আসছেন আনোয়ার। 

দলে আনোয়ার একা নন। তাঁর মতো সদ্য কৈশোর পার হওয়া ১৫ জন রয়েছেন। সবার পেশা চুরি। নেশা ইয়াবা সেবন। আনোয়ারসহ দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে। ২১ আগস্ট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও কীভাবে চুরি করে তাঁর বিস্তারিত বর্ণনা দেন আনোয়ার। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার কথিত বড় ভাই মো. সোহেল ওরফে সেলুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গতকাল আদালতে শিশু–কিশোর দিয়ে মালামাল চুরি করানোর কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। 

পুলিশ সূত্র জানায়, নিজের নামটিও লিখতে পারেন না আনোয়ার। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। বাবা জাফর ওরফে গুছা কিছুই করেন না। নগরের বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন তাঁরা। ছোটবেলা থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পরিত্যক্ত লোহার টুকরো সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। 

চার বছর আগে বাকলিয়া শান্তিনগর বগারবিলের ‘বড় ভাই’ সোহেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তিনি একসময় সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন নেই। চুরি করে যা পেতেন সবকিছু বড় ভাইকে জমা দিতেন। তিন ভাগের দুই ভাগ বড় ভাই নিতেন আর এক ভাগের টাকা পেতেন আনোয়ার। দৈনিক তাঁর আট থেকে দশটি ইয়াবা লাগে। একটি ইয়াবা আড়াই শ থেকে তিন শ টাকায় কেনেন। মা-বাবাকে কোনো টাকা দেন না। 

আনোয়ার জবানবন্দিতে চুরির করার ধরনেরও বর্ণনা দেন। উঁচুতলার ভবনের পেছনে লোহার পাইপ বেয়ে অনায়াসে আট–দশতলা পর্যন্ত উঠতে পারেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরের টেরিবাজার এলাকায় এক বিচারকের বাসায় চুরি করেন তিনি। সেখান থেকে ল্যাপটপ ও নগদ টাকা নেন। ১৯ জুলাই ভোর চারটার সময় সার্সন রোডের ব্যাটারি গলির একটি বাসায় গ্রিল ভেঙে ঢুকে স্বর্ণালংকার,নগদ টাকা ও চারটি মোবাইল সেট চুরি করেন। সর্বশেষ ৫ আগস্ট দিবাগত রাত আড়াইটায় জামালখান আইডিয়াল স্কুলের পাশে একটি ভবনের পাইপ বেয়ে আটতলার একটি বাসার রান্নাঘরের এডজাস্টফ্যান ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পাঁচটি মোবাইল সেট চুরি করেন। দু–এক দিন বিরতি দিয়ে আবার চুরি করতেন। কারণ চুরি না করলে ‘বড় ভাই’ মারধর করতেন। টাকা না থাকলে হাতখরচের জন্য বড় ভাই অগ্রিম টাকা দিতেন। পরে কেটে রাখতেন। 

আনোয়ার ছাড়াও মাসুদ আলী, শাকিল, হৃদয়সহ ১৫ জন সদস্য রয়েছেন দলে। তাঁরা সবাই চুরি করেন। পরে নিজেরা বসে ইয়াবা সেবন করেন। সবার বয়স ১৮ থেকে ২২ মধে৵। সবার পরিবার নিম্ন আয়ের। 

গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে চোরের দল পোষা বড় ভাই সোহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেগুলো বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ করে তাঁর দোকানে বিক্রি করতেন। তাঁর পরামর্শেই তাঁরা চুরি শুরু করেন। চুরি করে ৯০ হাজার টাকার মালামাল হলে ৬০ হাজার টাকা তিনি নেন। বাকি ৩০ হাজার টাকা যে চুরি করে তাঁকে দেন। 

নগরের কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কৈশোর পেরোনো ১৫ জনের একটি দলকে নিয়ে নগরের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনে চুরি করান বড় ভাই সোহেল। মালামালগুলো কিনে নেন তিনি। আর চুরি করা অর্থ দিয়ে ইয়াবা সেবন করে চোরের দল।

আনোয়ারের বাবা মো. জাফর বলেন, তাঁর ছেলেকে চোর আর নেশাখোর যাঁরা বানিয়েজেন তাঁদের বিচার চান তিনি। অনেক চেষ্টা করেও ছেলেকে ভালো করতে পারেননি।