মহাসড়কের ফরিদপুর অংশে যাত্রী-চালকেরা থাকেন আতঙ্কে

ফরিদপুরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অনেকেই আহত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব কারণে জাতীয় মহাসড়কের ফরিদপুর অংশ দিয়ে চলাচল করার সময় বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন।

গাড়ির চালক, বিআরটিএ এবং হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, পাশ কাটিয়ে আগে যাওয়ার প্রবণতা (ওভারটেকিং), পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো এবং মহাসড়কে নিষিদ্ধ যান চলাচলের কারণেই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ফরিদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে গত ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৯ মাসে ফরিদপুরে ৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হরিয়েছেন ৬৩ জন। আহত হয়েছেন ১৯৮ জন।

 ফরিদপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আতিয়ার রহমান জানান, ‘এ হিসাব পূর্ণাঙ্গ কি না তা বলতে পারছি না। যদিও দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটলে হাইওয়ে পুলিশ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাহায্য নিয়ে আমরা পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার চেষ্টা করি।’

বিআরটিত্র সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে শুধু ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কোমরপুর এলাকার থেকে ধুলদী পর্যন্ত এই তিন কিলোমিটার অংশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এঁদের অনেকেই এখন পঙ্গু হয়ে গেছেন। গত ৬ জুন ফরিদপুর সদরের ধুলদী রেলগেট এলাকায় এ কে ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ৬ জন প্রাণ হারান। এ সময় আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ধুলদী রেলগেট এলাকায় একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যান। ওই ঘটনায় ভারতীয় নাগরিকসহ ৬ জন নিহত ও কমপক্ষে ২২ যাত্রী আহত হন।

>

ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বরিশাল মহসড়কের ফরিদপুর অংশে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত ২০ মাসে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৮ জন নিহত হয়েছেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, ২৪ আগস্ট মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদরের ধুলদী ও কোমরপুর এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরকান্দা উপজেলার তালমা এলাকায় তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ১১টি প্রাণ। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। 

ফরিদপুর অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চালকদের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন চালানোর কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। ফিডার সড়ক থেকে মহাসড়কে ওঠার জন্য অন্তত ৫০টি পয়েন্ট রয়েছে। ফিডার রোড থেকে মহাসড়কে ওঠার সময় ওসব পয়েন্টে দুর্ঘটনা ঘটে।

হাইওয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা যেত। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গত শনিবার ধুলদীর সেতুর রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে যায় মূলত বাসের বেপরোয়া গতি এবং একটি মাহেন্দ্রকে ওভারটেক করার কারণে। আমরা স্পিডগান দিয়ে চেষ্টা করছি গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে। তবে আমাদের জনবলসংকট রয়েছে। 

এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নকিবুল বারী বলেন, জেলা দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা (এন-৭) ও ঢাকা-বরিশাল (এন-০০৮) মহাসড়কের ১১০ কিলোমিটার অংশ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাস্তা ভালো থাকায় চালকেরা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন অথচ ওই গাড়ির ফিটনেস ঠিক নেই। এই কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা চালকদের জন্য কঠিন। এ ছাড়া মহাসড়কগুলোতে নছিমন, করিমনসহ ছোট গাড়ি বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে চলার কারণে এত প্রাণহানি ঘটছে।