ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা: নির্দেশিকা সবাই মানছে না

বেসরকারি কিছু হাসপাতাল এখনো জাতীয় নির্দেশিকা মেনে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিচ্ছে না। কিছু হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা মেনে ডেঙ্গু সহায়তা কেন্দ্র খোলেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

ডেঙ্গু চিকিৎসা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গঠিত ১০টি দল এ পর্যন্ত দুটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সর্বশেষ ২২ আগস্ট জমা দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২৩টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ৮টি হাসপাতাল জাতীয় নির্দেশিকা মানছে না।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি ও ডেঙ্গু পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অযৌক্তিক ফি নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৫ জুলাই কিছু নির্দেশনা জারি করে। একই সঙ্গে তা মানা হচ্ছে কি না, তদারক করার জন্য ১০টি পরিদর্শক দল গঠন করে। প্রতিটি দলে দুই থেকে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা আছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছিল, প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু সহায়তা কেন্দ্র খুলতে হবে, ডেঙ্গুর দুই ধরনের পরীক্ষায় ফি হবে সর্বোচ্চ ৫০০ ও ৪০০ টাকা, জাতীয় নির্দেশিকা মেনে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিতে হবে।

জাতীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নির্দেশিকার সর্বশেষ সংস্করণে ডেঙ্গুর সমন্বিত চিকিৎসার বিস্তারিত দেওয়া আছে। ডেঙ্গু রোগীর সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি ও তার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বর্ণনা করা আছে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে বেশি মানুষের (৭৩ শতাংশ মৃত্যু) মৃত্যু হচ্ছে। শক সিনড্রোমের সময় শরীরে তরল ব্যবস্থাপনা কী হবে, তা–ও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তৈরি করা এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে চিকিৎসা দিলে ব্যবস্থাপনা ভালো হবে, মৃত্যুও এড়ানো যাবে।’

পরিদর্শক দলগুলো প্রথম পর্যায়ে ঢাকা শহরের ৫৮টি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে ৪ আগস্ট প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩৮টি হাসপাতাল জাতীয় নির্দেশিকা না মেনেই চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছিল। ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি বিষয়ক নির্দেশ মানেনি সাতটি হাসপাতাল। এর মধ্যে ৬টি হাসপাতাল নিডল ও ভ্যাকুয়ামের দাম আলাদা করে নিচ্ছিল। একটি হাসপাতালে পরীক্ষার ফি বেশি নিচ্ছিল।

এরপর পরিদর্শক দলগুলো পরিদর্শন শেষে দ্বিতীয় দফার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ২২ আগস্ট। এতে ২৩টি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শনের তথ্য আছে। এর মধ্যে ৮টি হাসপাতাল জাতীয় নির্দেশিকা সঠিকভাবে না মেনেই চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছিল। চারটি হাসপাতাল ডেঙ্গু সহায়তা কেন্দ্র খোলেনি। তবে ডেঙ্গু পরীক্ষার অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ কোনো হাসপাতালের বিরুদ্ধে ছিল না।

জানতে চাইলে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত এক-দেড় মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেখানে জাতীয় নির্দেশিকা মানা হচ্ছে, সেখানে ডেঙ্গুতে মৃত্যু তুলনামূলক কম হচ্ছে। এই নির্দেশিকা সবাইকে মেনে চলতে বাধ্য করা উচিত। এ জন্য সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ মানছে না এমন হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করেছিল পরিদর্শক দলগুলো। কিন্তু তারপরও কিছু হাসপাতাল অবস্থান বদলায়নি। পরিদর্শক দল একাধিক হাসপাতালে দ্বিতীয়বারও গিয়েছিল। দেখা গেছে, এমন চারটি হাসপাতাল এখনো নির্দেশিকা সঠিকভাবে মানছে না। এই হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুটি, মহাখালীতে একটি এবং অন্যটি গুলশানে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে, সজাগ রেখে বেশি রোগীকে মানসম্পন্ন সেবার আওতায় আনা। আমাদের এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’