রোগী থাকলে ভাড়া দেন না এই বাড়িওয়ালারা

শ্যামলীর ৩ নম্বর সড়কে বাড়ির ফটকে ঝোলানো নোটিশ ‘এই বিল্ডিংয়ে রোগী ভাড়া দেওয়া হয় না’। শ্যামলী, ঢাকা, ৩০ আগস্ট। ছবি: আবদুস সালাম
শ্যামলীর ৩ নম্বর সড়কে বাড়ির ফটকে ঝোলানো নোটিশ ‘এই বিল্ডিংয়ে রোগী ভাড়া দেওয়া হয় না’। শ্যামলী, ঢাকা, ৩০ আগস্ট। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর শ্যামলীর ৩ নম্বর সড়কে বাড়ি খুঁজছিলেন পারভেজ হাসান। তিনি একজন ফ্রিল্যান্সার ও সমাজকর্মী। একটি বাড়ির সামনে গিয়ে তিনি থমকে যান। বাড়িটির ফটকে ঝোলানো আছে একটি নোটিশ, ‘এই বিল্ডিংয়ে রোগী ভাড়া দেওয়া হয় না’। বাড়ির প্রহরীকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

ওই ৩ নম্বর সড়কেই পারভেজের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘পরিবারে কেউ রোগী থাকলে ভাড়া দেওয়া হয় না—এটা কেমন কথা? বিষয়টি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। এমন নোটিশের মাধ্যমে রোগী আর সুস্থ মানুষের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বললেন, ‘এমন অমানবিক চিন্তা দিয়ে মানবিক বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’

কথা হলো ভবনটির মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘রোগী এবং তাদের স্বজনেরা বারান্দায় কাপড় শুকাতে দেয়, বালতিতে করে মেডিকেল বর্জ্য নামায়, রক্তাক্ত তুলা ও ব্যান্ডেজ যথাযথ জায়গায় ফেলে না—ফলে নানা সমস্যা তৈরি হয়।' তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর কারণে আনহাইজেনিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া রোগী যখন মারা যায় এবং যখন বাড়ি থেকে লাশ নামানো হয় তখন আমাদের শিশুদের ওপর তার প্রভাব পড়ে।’ রোগী আছে এমন পরিবারকে ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ির অধিকাংশ মালিক ও ভাড়াটিয়ারও আপত্তি আছে বলে তিনি জানান। বাড়ির কেয়ার টেকার জাহাঙ্গীর হোসেন যোগ করলেন, ‘রোগীদের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত লিফট চালু রাখতে হয়, গেট খুলতে ও বন্ধ করতে হয়। এতে করে দারোয়ানদের অতিরিক্ত শ্রম দিতে হয়।’

এই বাড়ির মতো শ্যামলীর অনেক বাড়িতেই রোগীদের ভাড়া দেওয়া হয় না। শ্যামলী, ঢাকা, ৩০ আগস্ট। ছবি: আবদুস সালাম
এই বাড়ির মতো শ্যামলীর অনেক বাড়িতেই রোগীদের ভাড়া দেওয়া হয় না। শ্যামলী, ঢাকা, ৩০ আগস্ট। ছবি: আবদুস সালাম

শ্যামলী এলাকার আশপাশে অনেকগুলো সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এমন অনেক রোগী আছেন যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে হয়। কাছাকাছি হাসপাতাল থাকার কারণে এই রোগীদের স্বজনেরা আশপাশের বাড়িতে ভাড়া নিতে চান। যাতায়াতের সুবিধার কারণে তাঁরা এই এলাকায় ভাড়া নিতে চান। ওই এলাকার কয়েকজন ভাড়াটিয়া বললেন, এখানে অনেক বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করেন পরিবারে কেউ রোগী কি না। পরিবারে অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে সাধারণত তাঁরা ভাড়া দিতে চান না।

ফোনে কথা হলো, একই ভবনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়ালের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘রোগীদের নিয়ে অনেক ঝামেলা। রোগী এবং তাঁর স্বজনেরা ফ্লোর বর্জ্য দিয়ে ভরে ফেলে। অন্যান্য ভাড়াটিয়ারাও আপত্তি করে। এসব কারণে আমরা অবিবাহিত ও রোগী আছে এমন পরিবারকে ভাড়া দিই না।’ আবদুল আউয়াল জানান, অনেক সময় দেখা যায় রোগীর স্বজনেরা অল্প সময়ের জন্য বাসা ভাড়া নেন। এটিও তাদের ভাড়া না দেওয়ার আরেকটি কারণ।’

শ্যামলীর বেশির ভাগ বাড়িতে এমন নোটিশ ঝোলানো নেই। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ বাড়িতেই এমন ভাড়াটিয়াদের ভাড়া দেওয়া হয় না যাদের পরিবারে রোগী আছে। জসীম উদ্দিন বললেন, ‘আবাসিক এলাকায় এত হাসপাতাল থাকার কোনো মানে হয় না। এই হাসপাতালগুলো সব সমস্যার মূল।’