জিম্মাদার বিদেশে, গরু উধাও

ভারত থেকে পাচার করে আনার সময় ৯টি গরু জব্দ করে পুলিশ। পরে আদালতের অনুমতিক্রমে গরুগুলো স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় দেওয়া হয়। সম্প্রতি পুলিশকে কিছু না জানিয়েই ওই ব্যক্তি বিদেশে পাড়ি জমান। গরুগুলোরও কোনো খোঁজ মিলছে না। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়।

ওই ব্যক্তির নাম আবদুস শুকুর (৪৫)। তিনি উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নের গিয়াসনগর গ্রামের বাসিন্দা। শুকুরের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে গত বুধবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় স্ত্রী শারমিন বেগম ও ভাতিজা বদরুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, গরুগুলোর জন্য বাড়ির উঠানে ছাউনি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই গরুগুলো থাকত। শুকুর বিদেশে যাওয়ার ১০-১৫ দিন আগে গরুগুলো সরিয়ে নেন। এ বিষয়ে তিনি তাঁদের কিছুই জানাননি। শুকুর পুলিশকে হয়তো গরুগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন, এমনটাই তাঁরা ভেবেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে গরুর খোঁজে বাড়িতে পুলিশ আসছে। এ জন্য তাঁরাও কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে শুকুরও এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছেন না।

পুলিশ জানায়, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পুলিশের একটি দল উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাবনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯টি গরু জব্দ করে। গরুগুলো ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছিল। টের পেয়ে পাচারকারীরা সটকে পড়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় ওই দিনই কুলাউড়া থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আক্তার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন। একপর্যায়ে গিয়াসনগর গ্রামের বাসিন্দা আবদুস শুকুর গরুগুলো লালন–পালনের জন্য নিজের জিম্মায় নেওয়ার আগ্রহ দেখান। এ–সংক্রান্ত তাঁর একটি আবেদন আদালত মঞ্জুর করেন। এরপর শুকুর গরুগুলো নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৭ মে পুলিশ ওই মামলায় ছয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এদিকে মে মাসের শেষের দিকে শুকুর সৌদি আরবে চলে যান। এলাকাবাসীর কাছ থেকে এ খবর পায় পুলিশ। এরপর গরুগুলোর খোঁজে তাঁর বাড়িতে যায় পুলিশ। কিন্তু বাড়িতে গরুগুলো পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরাও কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গিয়াসনগর গ্রামের অন্তত পাঁচজন ব্যক্তি বলেন, শুকুরের জিম্মায় থাকা গরুগুলোর মধ্যে দুটি গাভি দুটি বাছুরের জন্ম দিয়েছিল। সবমিলিয়ে ১১টি গরু হয়েছিল। শুকুর গোপনে সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে কত টাকায়, কোথায় বা কার কাছে বিক্রি করা হয়েছে, সে তথ্য তাঁদের জানা নেই।

ভারতীয় গরু আটকের মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই সানা উল্লাহ। তবে তিনি এখন আর ওই থানায় নেই। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানায় বদলি হয়েছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সানা উল্লাহ বলেন, ‘আমি মামলার চার্জশিট দিয়ে এসেছি। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। শুকুর বিদেশে চলে যাওয়ার আগে বিষয়টি আমাদের জানাননি। কয়েক দিন আগে বিষয়টি শুনেছি। গরুগুলো বিক্রি করে দেওয়ার কথাও শুনেছি। শুকুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

কুলাউড়া থানার এসআই খছরুজ্জামান বর্তমানে গরুগুলোর সন্ধানের বিষয়টি তদারক করছেন। তিনি বুধবার বলেন, এখনো গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি। শুকুর সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন কি না, সে বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে গরুগুলো বিক্রি করে দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।