আশ্বাস পান, চাকরি পান না তানবীর

তানবীর ইসলাম
তানবীর ইসলাম

অভাবের সংসারে মা ও বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন তানবীর। সংসারে সচ্ছলতা আনতে ধারদেনা করে বিদেশে পাড়ি দেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায়তা করেনি। কাজ শুরু করার মাত্র ২৫ দিনের মাথায় যন্ত্র কেড়ে নেয় তাঁর বাঁ হাত। বিদেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে আসেন তানবীর।

আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি। এক হাত হারিয়েছেন কিন্তু কাজ করার স্পৃহা কমেনি। আবারও সংসারের হাল ধরতে চান তিনি। কিন্তু একটি চাকরির জন্য সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছু মেলেনি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান তানবীর। তাঁর আশা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে একটি চাকরি হবে তাঁর।

ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের শোলাকুণ্ডা গ্রামের ছেলে মো. তানবীর ইসলাম (২৪)। বাবা মো. জলিল ব্যাপারী (৫২) একজন কৃষক। অন্যের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। মা সালমা বেগম (৪৬) গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তানবীর ছোট। 

তানবীর বলেন, তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। কিন্তু নিত্য অভাবের সংসারে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর। পরিবারের ভাগ্যোন্নয়নে শ্রমিক হয়েছে বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। ধার করা চার লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যান তিনি ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল।

মালয়েশিয়া গিয়ে ৩ এপ্রিল থেকে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন তিনি। ওই কোম্পানি থাই গ্লাস প্রস্তুত করে। কারখানায় কাজ করার মাত্র ২৫ দিনের মাথায় অসাবধানতাবশত রোলার মেশিনের মধ্যে ঢুকে যায় তাঁর বাঁ হাত। সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞা হারান তিনি। জ্ঞান ফেরার পর তানবীর দেখেন, তিনি একটি হাসপাতালে। হাসপাতালের শয্যায় তিনি শুইয়ে আছেন। তাঁর বাঁ হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ছয় মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর আরও তিন মাস ছিলেন বিশ্রামে। সংসারের অভাব মেটানোর জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন কপর্দকশূন্য হয়ে।

তানবীর বলেন, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা দেয়। আর দেশের ফেরার জন্য বিমানে ওঠার আগে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় এক হাজার রিংগিত; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ হাজার টাকার সমান।

দেশে ফিরে দুচোখে অন্ধকার দেখেন তানবীর। বিদেশে যাওয়ার আগে বিভিন্ন মানুষ ও ব্যাংকের কাছ থেকে তিনি ঋণ নেন চার লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের জন্য একটি টাকাও পাঠাতে পারেননি। এর মধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এসে দেখেন, দেনার পরিমাণ বেড়ে সাত লাখ টাকা হয়েছে। নিজের হাত হারানোর ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা থেকে কিছু দেনা শোধ করেন।

তানবীর বলেন, একটি হাত হারালেও তিনি কারও গলগ্রহ হয়ে থাকতে চান না। কাজ করতে চান। অভাবের সংসারে হাসি ফোটাতে চান। দেশে ফেরার পর গত কয়েক মাস বিভিন্ন ব্যক্তির দুয়ারে তিনি ধরনা দিয়েছেন কাজের খোঁজে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছু জোটেনি। 

তবে হাল ছাড়েননি তিনি। বাঁ হাত হারানো তানবীর স্বপ্ন দেখেন সুন্দর ভবিষ্যতের। পরিবারের অভাব ঘোচানোর আশা করেন। 

তানবীরের মা সালমা বেগম বলেন, ‘একবুক আশা নিয়ে ধারদেনা করে একমাত্র ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আরজি, আপনি আমার তানবীরের দিকে তাকান। ওকে একটি কাজ জোগাড় করে দিন।’