১৯ বছরের চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী আগস্টেই

চলতি আগস্ট মাসেই ৫০ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সংখ্যা গত ১৯ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগীর চেয়েও বেশি।  

ঢাকার বাইরেও আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড তৈরির পাশাপাশি নতুন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এ বছর ঢাকাসহ ৬৪ জেলাতেই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৯১ জন।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্যে জানা গেল, সারা দেশেই এডিস মশা আছে, সারা দেশেই ডেঙ্গুর ঝুঁকি আছে। এতে ঘাবড়ালে চলবে না। সারা দেশে বিরামহীন মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি দক্ষ চিকিৎসা জনবল গড়ে তুলতে হবে।

২০০০ সালে দেশে প্রথম ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। তবে একাধিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক বলেছেন, এর আগেও দেশে ডেঙ্গু ছিল। ১৯৯৯ সালে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলেও তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ২০০০ সাল থেকে তথ্য রাখছে। এতে দেখা যায়, ২০০০ সালে ৫ হাজার ৫৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। ২০০১ সালে কিছু কমলেও ২০০২ সালে রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে কোনো বছর রোগী কমেছে, কখনো বেড়েছে। অতীতে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় ২০১৮ সালে, ১০ হাজার ১৪৮ জন। আর গত ১৯ বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগী ৫০ হাজার ১৭৬ জন।

চলতি আগস্ট মাসেই (গতকাল পর্যন্ত) রোগী ভর্তি হয়েছে ৫০ হাজার ৯৭৪ জন। এত অল্প সময়ে একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে এত বেশি মানুষের হাসপাতালে ভর্তির ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। এ বছর গত সাত মাসে ভর্তি হয়েছে ৬৯ হাজার ৪৩৫ জন। 

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এবার অতীতের চেয়ে বহু গুণ বেশি। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৩৭ জন রোগী ছিল ঢাকার বাইরে। সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৭ সালে, মোট ১১৭ জন। আর গত বছর ছিল ৫ জন। 

গতকাল শুক্রবার ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগী ছিল ৫৬০ জন। গত দুই সপ্তাহে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি রোগী ভর্তি হতে দেখা যাচ্ছে। 

২০০০ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি ছিল। ওই বছর ৯৩ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পরের দুই বছর মারা যায় যথাক্রমে ৪৪ ও ৫৮ জন। এরপর ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমতে থাকে। ২০১৮ সালে মারা যায় ২৬ জন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মুন্নী বেগম (৫২)। তাঁর বাড়ি কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকায়। 

মুন্নীর ছেলে মো. ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মা বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। গত বুধবার দুপুরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। 

এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পরিবারের সদস্য, সিভিল সার্জন ও সরকারি হিসাব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৮৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। 

সরকারের কাছে এ বছর ১৮০ জনের মৃত্যুর তথ্য আছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি ৮৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা করেছে। এর মধ্যে ৫২টি মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে কমিটি নিশ্চিত করেছে। তবে ২০১৮ সালের আগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের কোনো কমিটি ছিল না।

কুষ্টিয়ায় আইইডিসিআর

প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার প্রতিনিধি জানান, দাঁড়পাড়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি দেখতে ঢাকা থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ায় পৌঁছেছে। দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল অফিসার অনুপম সরকার। আজ শনিবার সকালে প্রতিনিধিদলের সদস্যদের দাঁড়পাড়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামের দাঁড়পাড়াতেই ৪১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তবে দাঁড়পাড়া থেকে ডেঙ্গু রোগ ধীরে ধীরে আড়িয়া ইউনিয়নজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ছাতারপাড়ার পাশের গ্রাম ইউসুফপুরেও ছয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে ছাতারপাড়া গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের মাঠকর্মী ওয়ালিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ইউসুফপুর গ্রামে ছয়জন রোগী ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া দাঁড়পাড়াতে আরও একজন রোগী পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে সেখানে ৪১ জন রোগী শনাক্ত হলো।