আলতাফ ছিলেন অগ্রণী

শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) শাওন মাহমুদ, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কামাল লোহানী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জামী-আল-সাফী ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। গতকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।  ছবি: প্রথম আলো
শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) শাওন মাহমুদ, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কামাল লোহানী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জামী-আল-সাফী ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। গতকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। ছবি: প্রথম আলো

‘এই নকশার ডিজাইনের কাজ এ রকমই এক বিকেলবেলায় শেষ হয়ে যায়। আমাদের অফিসের পাশে কিছু বাড়ি ছিল। সেখানকার ছোট ছেলেমেয়েরা আমাদের অফিসে আসত। ওরা আমাদের বিভিন্ন স্থাপনা, বাড়ির নকশা দেখত। মডেলগুলো দেখে খুশি হতো। কিন্তু সেদিন এই মডেল দেখে তারা খুব মন খারাপ করল। ওরা কিন্তু এতই ছোট যে এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ওরা মডেলটা দেখে বলল, “এটা কী মডেল বানিয়েছেন। এটা ভালো হয়নি। এটা দেখে কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায়।” আমি জামীর দিকে তাকাচ্ছি, জামী আমার দিকে। আমরা তো এটাই করতে চেয়েছি। আমরা যেটা করতে চেয়েছি, তার প্রথম অনুভূতির প্রকাশ পেয়েছিলাম ওই শিশুদের কাছ থেকে। এই স্থাপনার জন্য অনেক স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু যাঁদের জন্য এই রায়েরবাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের নকশা করেছিলাম, তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে যখন স্বীকৃতি পাই, তা হয়ে দাঁড়ায় বিশাল অর্জন।’

রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের দুই স্থপতির একজন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক ২০১৯’ পেয়ে এ কথা বললেন গতকাল শুক্রবার। তিনি ছাড়াও এ বছর পদক পান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ও স্মৃতিসৌধের আরেক স্থপতি জামী-আল-সাফী। শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে গতকাল দেওয়া হলো শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক। এবার পদকে ভূষিত হলেন যে তিনজন মানুষ, তাঁরা কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত। সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা কামাল লোহানী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রথম বার্তাটি লিখেছিলেন এবং পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্ববাসীর কাছে। ’৭১–এ অন্তর্ধান হওয়া শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক পেয়ে তিনি স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন এই বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে। বললেন, ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ সম্পর্কে এই কম সময়ে বলাটা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। দীর্ঘ সময় একসঙ্গে লড়াই করে আমরা যঁারা রাজপথ প্রকম্পিত করেছিলাম, অন্তত শিল্পীদের মধ্য থেকে বলতে পারি, আলতাফ মাহমুদ ছিলেন তঁাদের অগ্রণী। এই মানুষটির চোখে যে আগুন জ্বলত, সেটি তাঁর সুরে প্রকাশ পেত। তাঁকে ১৯৫৬ সালে প্রথম দেখি। তৎকালীন যুবলীগের একটি সম্মেলনে। সেদিন গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি প্যারোডি। কী অসাধারণ গলা তাঁর। এই যে দানাদার গলা। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এ রকম একটি গলাও আমি পাইনি। তিনি আমাদের যা শিখিয়েছিলেন, আমরা যেন সেই কাজটি করার চেষ্টা করি। তা হলো সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের কথা।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব শাওন মাহমুদ ও সভাপতি ছিলেন নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। প্রতিবছর এটি আয়োজন করে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে ‘মায়ের সঙ্গে ছেলের কথা’ আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ আর ‘ও বাঙালি’ গানটি গেয়ে শোনান বিপ্লব রায়হান।