তিন শিশুর মৃত্যুতে দুই কারণ দেখছে পুলিশ

চাঁদপুর
চাঁদপুর

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একই কক্ষে যে তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে তাতে দুটি কারণ ধারণা করছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ধারণা, আবদ্ধ ওই কক্ষটিতে রাখা ব্যাটারির অ্যাসিড তাপে বিষাক্ত গ্যাসে রূপান্তরিত হয়েছিল। অথবা ওই তিনজন ব্যাটারির অ্যাসিড পান করেছিল।

ওই তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ওই দলে ছিলেন ঢাকার সিআইডি কার্যালয়ের ক্রাইম টিম অ্যানালাইসিস বিভাগের পরিদর্শক মর্তুজা কবির ও রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ পিন্টু পোদ্দার। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাঁরা মতলব দক্ষিণ থানার পুলিশকে ওই তিনজনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন।

গতকাল শুক্রবার উপজেলার পূর্ব কলাদী জামে মসজিদের ইমামের কক্ষে ওই তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। এই তিনজনের মধ্যে মসজিদটির ইমাম মো. জামাল উদ্দিনের আট বছর বয়সী সন্তান আবদুল্লাহ আল নোমানও ছিল।

গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, ইমাম মো. জামাল উদ্দিন মসজিদসংলগ্ন যে ছোট্ট কক্ষটিতে থাকেন সেটিতে দুটি ছোট্ট জানালা ও একটি দরজা রয়েছে। কক্ষটির ভেতরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। কক্ষটিতে সৌর বিদ্যুতের দুটি ব্যাটারি ও মাইকের একটি ব্যাটারিও রয়েছে। ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শুক্রবার সারা দিন ওই মসজিদ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। তাঁদের ধারণা, শিশুদের মৃত্যুর পেছনে ব্যাটারির অ্যাসিড পান একটি কারণ হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতলব দক্ষিণ থানা-পুলিশের এক কর্মকর্তা ঢাকার সিআইডির ওই দুই বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে ওই মসজিদ এলাকায় ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। মসজিদটির ইমামের কক্ষে যে তিনটি ব্যাটারি ছিল সেগুলোর পানিতে সালফিউরিক অ্যাসিডের মিশ্রণ ছিল। সম্ভবত তীব্র গরম ও তাপের কারণে ওই আবদ্ধ কক্ষে সালফিউরিক অ্যাসিড বাষ্পীভূত হয়ে সালফারে পরিণত হয়। পরে অক্সিজেনের সংস্পর্শে এটি অধিকতর বিষাক্ত সালফার ডাই ও সালফার ট্রাই অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। ওই বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) তারা মারা যেতে পারে। এ ছাড়া ব্যাটারির অ্যাসিডমিশ্রিত পানি পান করার কারণেও তাদের মৃত্যু হতে পারে।

মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, মাইকের ব্যাটারির পানিতে তীব্র মাত্রার অ্যাসিড মিশ্রিত থাকে। ওই পানি দেখতে স্বাভাবিক পানির মতোই। পানি মনে করে সেটি পান করায় ওই শিশু-কিশোরদের মৃত্যু হতে পারে। এ ছাড়া গরমে ওই অ্যাসিড বিষাক্ত গ্যাসে রূপান্তরিত হওয়ার কারণেও আবদ্ধ কক্ষটিতে দমবন্ধ হয়ে তারা মারা যেতে পারে।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ বলেন, পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে। সবদিক মাথায় রেখে তদন্তকাজ চলছে। কক্ষটির ব্যাটারির অ্যাসিড থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়ে বা কক্ষে রাখা অ্যাসিড পান করার কারণেও এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না করে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার আগে ওই তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

আজ বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে মারা যাওয়া শিশু-কিশোর আবদুল্লাহ আল নোমান (৮), মো. ইব্রাহিম (১২) ও মো. রিফাতের (১৫) দাফন করা হয়। এর আগে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হয়।