এনআরসি: উদ্বেগ নয়, সতর্ক থাকতে হবে

ইমতিয়াজ আহমেদ
ইমতিয়াজ আহমেদ

আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে এটি নিয়ে বাংলাদেশের বড় রকমের উদ্বেগের কিছু নেই। আমরা শুরু থেকেই এটাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে এসেছি। তবু সেখানকার রাজনীতিবিদেরা রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময় বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। তাঁরা অনেক বড় করে বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সংখ্যাটিও অনেক বাড়িয়ে বলা হয়েছিল। এখন তো সেই পরিস্থিতিও নেই। বিষয়টি ভারতের রাজনীতিতে আলোচিত। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারি পর্যায়ে বিষয়টি কখনোই আলোচনায় ছিল না।

আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকা সফরের সময় স্পষ্ট করে বলে গেছেন, এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটা নিয়ে বাংলাদেশের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এরপর থেকে বাংলাদেশের আর কোনো উদ্বেগ থাকার কথা নয়। তবে অবশ্যই পুরো বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই যেন বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ তৈরি না হয়। প্রতিবেশী দুই দেশের কেউ এমনটি চাইবে না। দুই দেশকেই সতর্ক থাকতে হবে, দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। ভারতের রাজনীতিবিদদেরও বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। তাঁদের বক্তব্যের কারণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতিতে উসকানি তৈরি হতে পারে।

ভারতের গবেষকেরা শুরু থেকেই বলেছেন, বাইরে থেকে আসামে যাওয়া মানুষের একটি বড় অংশই গেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। আমরাও বলেছি, বাংলাদেশ থেকে আসামে যাওয়ার কারণ নেই। কিছু মানুষ আত্মীয়তার কারণে সীমান্তে এপার-ওপার করে থাকে। কিন্তু বিজেপি নেতারা এটিকে রাজনৈতিক স্বার্থে বড় করে সামনে এনেছিলেন, যার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এনআরসি ঘোষণার পর তা প্রমাণ হয়ে গেছে।

কোনো সন্দেহ নেই, বিজেপি দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর থেকে ভারত দ্বিজাতিতত্ত্বে চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় গান্ধী, নেহরু, রবীন্দ্রনাথেরও সমালোচনা করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। কিন্তু বাংলাদেশ তো মুক্তিযুদ্ধ করে দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ আর সেখানে ফিরে যাবে না। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে বড় রকমের উন্নতি হয়েছে। ভারত সরকার কোনোভাবেই এটি নষ্ট করতে চাইবে না। ভারত নিশ্চয়ই সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করবে। তারা কখনোই চাইবে না বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতিতে কোনো উসকানি তৈরি হোক। তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণভাবেই সমাধান করার সাধ্যমতো চেষ্টা করবে তারা। বিদ্যমান সংকট সমাধানে ভারত নিশ্চয়ই কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করবেই।

সংবাদে প্রকাশ, প্রায় ১৯ লাখ মানুষের নাম এনআরসির তালিকায় ওঠেনি। যত দূর শোনা যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশই হিন্দুধর্মাবলম্বী। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির অবস্থান বদলে যাবে। বিজেপি নেতারা শুরু থেকেই বলেছেন, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তাই নাগরিকত্ব সংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। যারা এ সংকটে থাকবে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া না হলেও ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে রাখার কথা ইতিমধ্যেই আলোচনা হচ্ছে। যদিও ওই নাগরিকেরা এটি মেনে নেবেন কি না, সেই বিষয়টি সামনে থাকছে। তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। তা ছাড়া ভারতের বিরাট নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন, অ্যাকটিভিস্টরা বিষয়টি সহজে ছেড়ে দেবেন—এমনটি মনে হয় না। তাঁরাও সংকট সমাধানে কোনো না কোনোভাবে শক্ত ভূমিকা রাখবেন। 

লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়