শুরু থেকেই বিআইটিআইডি অবহেলার শিকার

বিআইটিআইডি হাসপাতাল
বিআইটিআইডি হাসপাতাল

প্রতিষ্ঠাটির নাম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস বা বিআইটিআইডি। সংক্রামক রোগ নিয়ে প্রধানত গবেষণা ও চিকিৎসা দেওয়ার জন্যই চট্টগ্রামে এই প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি অবহেলার শিকার। ডেঙ্গু জ্বরসহ নানা রোগ ছড়ানো কীটপতঙ্গ নিয়ে জরিপ কিংবা গবেষণা করার জন্য সৃষ্ট তিনটি পদ শুরু থেকেই শূন্য রয়েছে এখানে। ফলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপের এই সময়ে চিকিৎসার বাইরে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৬ সাল থেকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এ বছরও এখানে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল শনিবার একজন মারাও গেছেন। এ অবস্থায়ও বাড়তি কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। কেবল ২৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে।

২০১৩ সালে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডি কার্যক্রম শুরু করে। কুকুরসহ নানা প্রাণির কামড়, ডায়রিয়া, জলবসন্ত, ডেঙ্গু জ্বর, ধনুষ্টংকার ইত্যাদি নানা সংক্রমাক ও ‘অবহেলিত রোগে’র চিকিৎসা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির ১৪টি বিভাগের মোট পদ আছে ২০৭টি। কিন্তু অর্ধেক জনবল এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

১৪ বিভাগের মধ্যে মেডিকেল এন্টমোলজি বা পতঙ্গবিজ্ঞান নামে একটি বিভাগ রয়েছে। এতে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন গবেষকের পদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পদগুলো শূন্য রয়েছে। যার জন্য কীটপতঙ্গ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি এখানে।

বিআইটিআইডির পরিচালক অধ্যাপক এম এ হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কীটতত্ত্ববিদের পদগুলো শুরু থেকেই খালি রয়েছে। অধিদপ্তরে জনবল চেয়েছি। এসব পদে লোক থাকলে মশা কিংবা অন্যান্য পতঙ্গ নিয়ে গবেষণা সম্ভব হতো। এখন আমরা ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের ওপর একটা গবেষণা শুরু করেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বিআইটিআইডি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। সংক্রামক রোগের কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিয়ে তাদের কাজ। কিন্তু এটি চট্টগ্রামে হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত জনবল এখনো পায়নি। জনবল পেলে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের জন্য মঙ্গল হতো।

>পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন গবেষকের পদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পদগুলো শূন্য।

সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা রোগ দেখা দিল তখনই এটা নিয়ে তৎপর হলাম তা নয়, এটা চলমান একটা প্রক্রিয়া। আজকের জন্য নয়, কালকের জন্য নয়, আগামীর জন্য প্রয়োজন। রোগগুলো থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি, সে জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপ চলমান রাখা প্রয়োজন।’

ডেঙ্গু নিয়ে আগাম ধারণা ছিল না 

চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২০১৭ সালে এডিস মশা নিয়ে জরিপ কার্যক্রম করা হয়েছিল। সেবার ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল এসে এই জরিপ কার্যক্রম চালিয়েছিল। এবার ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু জ্বরে রোগী বেশি পাওয়া গেছে। নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকের বেশি স্থানীয় মশা দ্বারা আক্রান্ত। কিন্তু জরিপ না থাকায় ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আগে আগাম কোনো ধারণা দেওয়া যায়নি। সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে আবার জরিপ চালাতে একটি দল আসার কথা রয়েছে।

সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৭ সালের সর্বশেষ মশা জরিপকাজে নগরের সুগন্ধা, চশমা পাহাড়, দেব পাহাড়, মাদারবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে এডিস মশার মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের উপস্থিতি বেশি ছিল। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে আমরা ওই সব এলাকায় মশা নিধনে অতিরিক্ত জোর দিতে বলেছিলাম। এরপর আর জরিপ হয়নি। হলে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। কিন্তু সেই জনবল বিআইটিআইডি কিংবা চট্টগ্রামে নেই।’

প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, বিআইটিআইডি এখন কেবল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে গত নভেম্বর থেকে তারা চিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করে। এ জন্য নভেম্বরে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ২০০ কীট সংগ্রহ করে রাখে। এবার বিআইটিআইডি ২৯ রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে।