মাল্টায় দিনবদলের স্বপ্ন

নিজের মাল্টাবাগানে গোলাম মোহাম্মদ আযম। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে মিরসরাইয়ের পূর্ব বড় কমলদহ এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নিজের মাল্টাবাগানে গোলাম মোহাম্মদ আযম। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে মিরসরাইয়ের পূর্ব বড় কমলদহ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

স্ত্রী আর পাঁচ মেয়ে নিয়ে ভালোই চলছিল নির্মাণ ঠিকাদার গোলাম মোহাম্মদ আযমের সংসার। হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। কিছুটা সুস্থ হয়ে আর্থিক অনটন ঘোচাতে আবার কিছু শুরু করতে চাইলেন তিনি। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিলেন বাড়ির পাশের পতিত জমিতে মাল্টাবাগান গড়তে।

তাঁদের পরামর্শ মেনে নিজের দেড় বিঘা জমিতে রোপণ করলেন বারি মাল্টা-১-এর চারা। তিন বছর আগে শুরু করা সেই মাল্টাবাগানের প্রতিটি গাছে এখন ফল ধরেছে। এই বাগানেই দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মোহাম্মদ আযম।

গত ২৩ আগস্ট দুপুরে উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের পূর্ব বড় কমলদহ এলাকায় মোহাম্মদ আযমের মাল্টাবাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় পাকা সবুজ মাল্টা। ১২ ফুট দূরত্বে সারি করে লাগানো প্রতিটি গাছের উচ্চতা ৭-৮ ফুটের মতো। শুকনা মৌসুমে সার্বক্ষণিক সেচের জন্য প্রতিটি গাছের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে চিকন পাইপ।

মিরসরাই কৃষি কার্যালয় থেকে পাওয়া ১০০টি মাল্টা চারা নিয়ে ২০১৬ সালে বাগান শুরু করেন আযম। কৌশলগত সব পরামর্শ ও সহযোগিতা দেন মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। তিন বছরে এ বাগান গড়ে তুলতে দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে তাঁর। গত বছর থেকে ফল আসতে শুরু করেছে বাগানটিতে। প্রথমবার ১০০ গাছ থেকে ৭০০টির মতো পাকা মাল্টা পাওয়া যায়। ৬-৭টিতে হয় ১ কেজি। এবার ২০০-২৫০টি করে মাল্টা ধরেছে প্রতিটি গাছে। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি শুরু হবে বিক্রি। পাইকারি দরে প্রতি কেজি মাল্টা ১৫০ টাকা করে বিক্রি করা যায়। আযম বলেন, সব ঠিক থাকলে এবার পুরো বাগানে আড়াই থেকে তিন টন মাল্টা পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো। এবার ফল বিক্রি করে লাভের টাকায় বাগান আরও বড় করার স্বপ্ন তাঁর। আযম বলেন, ‘আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব আমি।’

মিরসরাই উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ে পাহাড়ের কোলঘেঁষা উঁচু জমিগুলো বারি মাল্টা-১ চাষের জন্য খুব উপযোগী। বারি মাল্টা-১ খুবই মিষ্টি। পাকলেও সবুজ থাকে। বাজারে চাহিদাও ভালো। তাই এই জাত দিয়ে মোহাম্মদ আযমকে বাগান করতে বলি আমরা। ফলনসহ সব দিক বিচারেই তাঁর বাগানটি একটি আদর্শ মাল্টাবাগান।’

এলাকার অনেকেই এখন আযমের মাল্টাবাগান দেখতে আসেন। তাঁর এই বাগান দেখে এলাকার ছালাউদ্দিন, আবদুল আউয়াল, মো. সেহেল, আজিজ উদ্দিন ও ইমাম হোসেন নামের আরও পাঁচ তরুণ মাল্টাবাগান শুরু করেছেন।

আযমের উদ্যোগে খুশি স্থানীয় মানুষও। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবদুল কাইয়ুমের ভাষ্য, ‘আযম নিজের পাশাপাশি এলাকার তরুণদেরও মাল্টাবাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এটা দারুণ ব্যাপার।’