পার্কে থাকা রান্নাঘর উচ্ছেদ নিয়ে তুলকালাম

মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি–ব্লকে অবস্থিত পার্কের এক কোনায় থাকা টিনশেড ঘরটি গতকাল উচ্ছেদ করতে গেলে মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা বাধা দেয়। মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে অভিযান পরিচালনাকারী এবং এলাকার রাজনৈতিক কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।  ছবি: প্রথম আলো
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি–ব্লকে অবস্থিত পার্কের এক কোনায় থাকা টিনশেড ঘরটি গতকাল উচ্ছেদ করতে গেলে মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা বাধা দেয়। মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে অভিযান পরিচালনাকারী এবং এলাকার রাজনৈতিক কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছবি: প্রথম আলো

উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সংস্কারাধীন পার্কে থাকা একটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন সংস্থাটির অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি–ব্লকে অবস্থিত পার্কের এক কোনায় থাকা টিনশেড ঘরটি উচ্ছেদ করতে গেলে মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা বাধা দেয়। মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে অভিযান পরিচালনাকারী এবং এলাকার রাজনৈতিক কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, পার্কটির সংস্কারকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় থাকা ওই অবৈধ ঘরটির কারণে পুরো কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। পার্কের ভেতরে থাকা ওই ঘর মাদ্রাসার ছাত্রদের রান্নার ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার ও আবদুল হামিদ মিয়ার তত্ত্বাবধানে অভিযানে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম, অঞ্চল–৫–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেনসহ বর্জ্য ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযানে ছিলেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযানকারী দলটি পার্কের কাছে পৌঁছাতেই জামিয়া বায়তুল আমান মিনার মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্রের (মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা) ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্ররা উচ্ছেদ ঠেকাতে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পার্কের ওই ঘর ভাঙতে গেলে ভেতর থেকে গরম পানি ও মরিচের গুঁড়া ছিটনো হয়, ইটের টুকরো নিক্ষেপ করা হয়। পার্কের ভেতরে থাকা ছাত্ররা ঘরটি ভাঙতে বাধা দেয়। এ সময় কাউন্সিলরদের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে মাদ্রাসার ছাত্রদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরো ছুড়ে মারে। একপর্যায়ে ছাত্রদের বাধার মুখেই অবৈধ স্থাপনাটি ভাঙার কাজ শুরু করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। 

ঘরটি ভাঙার সময় হাতে মাইক নিয়ে ডিএনসিসি প্যানেল মেয়র বলেন, ‘আপনাদের বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। আপনারা সবাই সরে যান। ঘরের ভেতরে কেউ থাকবেন না। সিটি করপোরেশনের কাজে বাধা দেবেন না।’ 

পরে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সময়েই পার্ক উন্নয়নের পরিকল্পনা হয়েছিল। গত বছর এই কাজ শুরু হয়। গণপূর্তের জায়গা হলেও পার্ক বানাতে জায়গাটি সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। তাদের ঘরটি সরিয়ে নিতে বলা হলেও তারা শোনেনি। আমরা তাদের এ–ও বলেছি, এলাকাবাসী ও শিশুদের জন্য পার্ক হচ্ছে। এই সুবিধা সবাই পাবে। তবু তারা কথা শোনেনি। পরে আজকে (গতকাল) মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদের কথা বলি এবং তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।’ ডিএনসিসি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ স্থাপনাটি সরাতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলা হয়েছে। তারা কথা শোনেনি। এতে পার্কের সংস্কারকাজ শেষ করা যাচ্ছে না। গত আট মাস ধরে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে ওই মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেনের (সাবেক সাংসদ) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেন, পার্কের কাজ ৯০ ভাগ হলেও পার্কের সীমানার ভেতরে থাকা মাদ্রাসার টিনশেড ঘরের কারণে কাজটা শেষ হচ্ছে না। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে অন্য জায়গায় সরে যেতে বলার পরও তারা রাজি নয়। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা অস্থির হয়ে গিয়েছিল। আমরা আমাদের উচ্ছেদকাজ করেছি। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন কোনো স্থাপনা তৈরির চেষ্টা করলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, মকবুল হোসেন যখন সংসদ সদস্য ছিলেন, তখন তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য পার্কের এক কোণে টিনশেড ঘর তুলে দেন। ওই ঘরে রান্না ও খাওয়াদাওয়া হতো।

তিনি বলেন, ‘ঘরটি ভাঙার কাজ শেষ হলে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও সাংবাদিকেরা চলে যাওয়ার পর মকবুল হোসেন ও মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ওপর আবার হামলা করে। পরে কর্মীরা সেখান থেকে কোনোমতে দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পান।’