রোহিঙ্গা শিবিরে এনজিও কার্যক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি

রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে আছে শঙ্কা। সম্প্রতি টেকনাফের একটি আশ্রয়শিবিরে।  প্রথম আলো
রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে আছে শঙ্কা। সম্প্রতি টেকনাফের একটি আশ্রয়শিবিরে। প্রথম আলো

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এনজিও কার্যক্রম কীভাবে চলছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধের কথা বলায় বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তবে সরকারের এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরে শুধু মুক্তি-কক্সবাজার নামের একটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। অন্য এনজিওর ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

তবে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বেশ কিছু এনজিওর কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগ পাওয়ায় তা অনুসন্ধান করে দেখতে বলা হয়। এর আগে গত বছরের শেষে ও চলতি বছরের জুনে দুই দফায় এনজিওবিষয়ক ব্যুরো রোহিঙ্গা শিবিরে ছয়টি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় জানিয়েছে, মুক্তিসহ সাতটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই সাত এনজিওকে রোহিঙ্গা শিবিরে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তারা তা ভঙ্গ করেছে। তাই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা শিবিরে ১৪৬টি এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে ৮০টি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বাকিগুলো জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও। তারা রোহিঙ্গাদের আবাসন, খাদ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করছে।

জাতীয় ও স্থানীয় ৪৩টি এনজিও নিয়ে গঠিত ‘এনজিও ফোরাম কক্সবাজার’-এর কো-চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

গত ২৬ মে উখিয়া উপজেলার কোটবাজারের একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার নিড়ানি (ধারালো অস্ত্র) জব্দ করে প্রশাসন। অভিযোগ ওঠে, নিড়ানিগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য তৈরি করেছিল ‘মুক্তি-কক্সবাজার’ নামে বেসরকারি সংস্থা। এরপর ২৮ আগস্ট এনজিওটির ছয়টি প্রকল্প স্থগিত করা হয়।

মুক্তি-কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল দে সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নিড়ানিগুলো তৈরি হচ্ছিল সংস্থাটির উপকারভোগী স্থানীয় টেকনাফের কৃষক পরিবারের সবজি চাষের জন্য। কিন্তু মহলবিশেষের অপপ্রচারে ৬টি প্রকল্প বন্ধ হলেও আরও ২৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। কিন্তু কাজ সামলাতে হচ্ছে মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে।

সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকার দেশি-বিদেশি ৪১টি এনজিও কার্যক্রম বন্ধ করেছিল। এর মধ্যে সাতটি ছাড়া অন্যগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

আরআরআরসির কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, সম্প্রতি শিবির থেকে ৪১ এনজিওকে প্রত্যাহারের খবর তাঁর জানা নেই। শিবিরে সরকার ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডে কোনো এনজিও যুক্ত কি না, তার অনুসন্ধান চলছে। একই কথা বলেন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনও।