গণশৌচাগারের দেয়ালে নাজিরের পটচিত্র

গণশৌচাগারের দেয়ালে বর্ণিল পটচিত্র। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
গণশৌচাগারের দেয়ালে বর্ণিল পটচিত্র। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

একটি পাখি চারটি ডিম দিয়েছে। দুটি ডিম ফুটেছে। এর একটি থেকে পাখির ছানা বের হলো। অন্য ডিমটি থেকে বের হলো বাঘের ছানা! এমন আরও নানা কাহিনি ফুটে উঠেছে নাজির হোসেনের নতুন পটচিত্রে। আর এবারের বড় পরিসরে আঁকা পটচিত্রটি করা হয়েছে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণের একটি গণশৌচাগারের গায়।

জাতীয় নাট্যশালা ও চিত্রশালার মাঝখানে সীমানাপ্রাচীরের কাছের গণশৌচাগারটি অনেকটা অযত্ন–অবহেলায় পড়েছিল। পটচিত্রশিল্পী নাজির হোসেন মনের মাধুরী দিয়ে সেটিকে রাঙিয়ে দিয়েছেন। এখন এটিকে গণশৌচাগারের চেয়ে ছবিতে ভরা বিশাল আকৃতির ক্যানভাস বলেই বেশি মনে হয়। শৌচাগারের সীমানাপ্রাচীরমুখী দেয়ালটি ছাড়া বাকি তিনটি দেয়ালে নাজির আবহমান বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তুলেছেন। গত ২৪ আগস্ট তিনি কাজ শুরু করেন। আঁকা শেষ হলো আজ সোমবার।

পটচিত্রে ফুটে উঠেছে আবহমান বাংলার রূপ। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
পটচিত্রে ফুটে উঠেছে আবহমান বাংলার রূপ। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই কথা হলো নাজিরের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত ২০ আগস্ট একাডেমি প্রাঙ্গণে পটচিত্র করছিলেন। সে সময়ই এই শৌচাগারটি তার নজরে আসে। তারপর একাডেমির চারুকলা বিভাগের গাইড লেকচারার সুজন মাহাবুবের মাধ্যমে মহাপরিচালকের অনুমতি ও সহযোগিতা পান নাজির। শুরু হয় শৌচাগার রাঙিয়ে তোলার কাজ। তবে কাজটির জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেননি। নাজির বললেন, ‘শিল্পকলায় দেশি-বিদেশি অনেক মানুষ এই প্রাঙ্গণে আসে। আমি চাই তারা আমাদের লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোক।’ ফোনে কথা হলো সুজন মাহাবুবের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমাদের মহাপরিচালক চান শিল্পকলা একাডেমির প্রতিটি ইঞ্চি নান্দনিক হোক। সেই লক্ষ্য থেকেই নাজিরকে এই কাজটি দেওয়া হয়।’ 

পটচিত্রে ছেয়ে যাওয়ায় এখন নজরকাড়া শৌচাগারটি। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
পটচিত্রে ছেয়ে যাওয়ায় এখন নজরকাড়া শৌচাগারটি। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

তিনটি দেয়ালে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বেঙ্গল টাইগার, নদী, শাপলা, হাতি, মৎস্যকন্যা, পরি, প্যাঁচা, ময়ূর, বাউল, জেলে, কৃষক, গাঁয়ের বধূ, নৌকা ইত্যাদি। ছবিতে ছবিতে বলা হয়েছে সেই কচ্ছপ ও খরগোশের গল্প, বাঘের কণ্ঠ থেকে বকের হাড় বের করার গল্পসহ নানা লোককাহিনি। রং হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে লাল, হলুদ, সবুজ, সাদা, কালো ও নীল।

পটচিত্রে নাজির হোসেনের তুলির শেষ আঁচড়। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
পটচিত্রে নাজির হোসেনের তুলির শেষ আঁচড়। সেগুনবাগিচা, ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

নাজির চান, ঢাকার প্রতিটি দেয়াল পটচিত্রে ছেয়ে যাক। তিনি বললেন, ‘পটচিত্রকলায় পৃষ্ঠপোষকতা নেই। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লোকশিল্পের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারতাম। শিল্পকলাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত আধুনিক শিল্পকলার সঙ্গে লোকজ শিল্পকলার মেলবন্ধন ঘটানো। যাতে পটচিত্রের মতো মাধ্যম গুরুত্ব না হারায়।’

পটুয়া নাজির হোসেনের জন্ম ১৯৮২ সালে, দিনাজপুরে। ১৯৯৪ সালে শিল্পকলায় হাতেখড়ি। ২০০০ সাল থেকে পটচিত্রচর্চা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তাঁর মোট ৫২টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হয়েছে। তাঁর পটচিত্রে বিষয় হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, আবহমান বাংলার রূপ এবং দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাপন।