জাবিতে উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ: পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সোমবার বেলা ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ ব্যানারে’ শিক্ষকেরা ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন।

শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের এই মানববন্ধন চলাকালে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসকেরাও মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা দাপ্তরিক সেবা ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গত ৩০ মে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পাঁচটি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এ সব হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রায় ১২ শ গাছ ছিল। এই গাছ কাটার প্রতিবাদ ও প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা ‘অপরিকল্পিত’ দাবি করে আন্দোলন করতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর মধ্যেই উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করে প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরদিন থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর গত রোববার থেকে এসব অভিযোগ ‘মিথ্যা ও কল্পিত’ দাবি করে পাল্টা কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা।

মানববন্ধন চলাকালে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উন্নয়নে কুচক্রীমহল যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল, জাহাঙ্গীরনগরেও তা করা হচ্ছে। এই মিথ্যাচার করে উন্নয়নকাজকে বন্ধ রাখতে পারবে না। সকলের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হবে। মিথ্যাচারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ করা বন্ধ করুন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা জাকসু নির্বাচন করুন। নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে আসুন এবং সব ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিবাদ করুন।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা অভিযোগ করেছেন কিন্তু অভিযোগ করলেই একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা যায় না। এ দেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ আছে। বিচার বিভাগ সেটি তদন্ত করতে পারে, তদন্ত করার ক্ষমতা উপাচার্যের নেই।’

মানববন্ধনে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অজিত কুমার মজুমদার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ আলী প্রমুখ।

প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

এ অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে সোমবার বেলা একটায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ও অনুষদ ভবন প্রদক্ষিণ করে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিন দফা দাবি পূরণের জন্য প্রশাসনকে সময় দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু দাবি না মেনে তাঁরা আন্দোলনকারীদের উন্নয়নবিরোধী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক রেজাউল করিম তালুকদার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য মিখা পিরেগু প্রমুখ।