ঢাকায় জাতীয় পতাকার রঙে রঙিন বিদ্যালয়

লাল-সবুজ রঙের বিশাল জাতীয় পতাকা আঁকা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদ্যালয়টি যেন এক বিশাল রঙিন ক্যানভাস। সম্প্রতি বছিলায়।  ছবি: আশরাফুল আলম
লাল-সবুজ রঙের বিশাল জাতীয় পতাকা আঁকা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদ্যালয়টি যেন এক বিশাল রঙিন ক্যানভাস। সম্প্রতি বছিলায়। ছবি: আশরাফুল আলম

বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে বিদ্যালয়টির পুরো দেয়ালজুড়ে লাল-সবুজ রঙের বিশাল জাতীয় পতাকা আঁকা। প্রথম দেখায় মনে হবে বিদ্যালয়টি যেন এক বিশাল রঙিন ক্যানভাস। 

জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে মোহাম্মদপুরের বছিলা (পুরান) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি খুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। 

বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুসংলগ্ন পাশাপাশি দুটি ভবন নিয়ে বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভবন দুটির পৃথক তিনটি বড় দেয়ালে সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত আঁকা। সড়ক ও নৌপথে যাতায়াতে সময় বিদ্যালয়টি সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। চলার পথে অনেকেই থমকে যান। সহসাই যেন চোখ ফেরাতে পারেন না। অনেকে আবার আগ্রহ নিয়ে ভবনের সামনে যান, ছবি তোলেন। এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। 

বিদ্যালয়ের বাইরের দেয়ালের এই জাতীয় পতাকার রঙের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের ভেতরের দেয়ালে বর্ণমালা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, ফুল, ফল, পাখি, মীনা-রাজুর ছবিসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক চিত্রমালা আঁকা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা খুব খুশি। বিদ্যালয়টির সামনে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল পঞ্চম শ্রেণির খুশি আক্তার। সে বলে, আগে বিদ্যালয়ের দেয়ালের রং ছিল কালচে। তা দেখে ভালো লাগত না। এখন লাল-সবুজ রং করার পর খুব সুন্দর লাগছে।

বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা আকতার বলেন, অনেক বছর ধরে বিদ্যালয়ের ভবন দুটিতে রং করা হয়নি। ফলে পলেস্তারা খসে পড়ে। বিদ্যুতের সংযোগগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সম্প্রতি বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের সময় এটি জাতীয় পতাকার রঙে রাঙানোর নির্দেশনা দিয়েছেন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার। সংস্কার ও মেরামতের কাজে বরাদ্দ ছিল ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি জানান, এখন বিদ্যালয়টিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রায় ৪০ জন। ২০১৮ সালে এই বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিল ৩১ জন। শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয়জন।

মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত প্রতি অর্থবছরের শুরুতে বিদ্যালয় মেরামতসহ আনুষঙ্গিক কাজে বাবদ অর্থ বরাদ্দ দেয় সরকার। এবার এই টাকার একাংশ দিয়ে বছিলাসহ মোহাম্মদপুর থানা শিক্ষা কর্মকর্তার আওতাধীন ২৩টি বিদ্যালয় ভবন নান্দনিকভাবে রাঙাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রং করা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রং বাংলাদেশর প্রতীক। এই রং দেখলেই সবার মনে প্রশান্তি আসে। দেশের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়ে। শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম জন্মাতে সহায়ক হবে লাল-সবুজ রং। এই ভাবনা থেকেই বিদ্যায়টি জাতীয় পতাকার রঙে রাঙানো হয়েছে। 

বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয় ভবন ভাঙাচোরা, বিবর্ণ থাকলে মনমরা হয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা। পড়াশোনা বা খেলাধুলায় মনোযোগী হয় না। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো হলে শিশুরা পড়াশোনা-খেলাধুলায় আনন্দ পায়। ইতিমধ্যে এই বিদ্যালয়ে তা দেখা যাচ্ছে। ঝরে পড়া শিশুরাও এখন বিদ্যালয়মুখী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তাঁরা। এখন বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো হওয়ায় পড়াশোনার মান আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা জানান, বিদ্যালয়ের এই লাল-সবুজ রং শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বছিলার মানুষের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। 

এই বিদ্যালয়সংলগ্ন বছিলা মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ফজলুল করিম জানান, ১৯৩২ সালে (শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুসংলগ্ন) স্থাপন করা হয় বছিলা (পুরান) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয় ভবনটির পুনঃসংস্কার করা হয়। তখন এই ভবনটির রং ছিল ফিকে সাদা। দিন যত যায়, ভবনের রং তত কালচে বা মলিন হয়। এখন ভবনটিতে রং করার পর তার দিকে তাকালে বুকের ভেতরটায় শান্তি লাগে।