ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ফেসবুকে

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার ঘোষ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তাঁর ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল এবং তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাবরেজিস্ট্রার এ দাবি করেন।

সুব্রত কুমার ঘোষের ‘গুনে গুনে ঘুষ নেওয়া’র দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা রেজিস্ট্রার আবুল কালাম স্বপ্রণোদিত হয়ে গত বুধবার শাহজাদপুরে যান। তিনি ঘটনাটির নিজস্ব কায়দায় তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

জেলা রেজিস্ট্রার আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিও এবং লিখিত অভিযোগ পেয়ে যে তদন্ত শুরু করি, সেটি বিভাগীয় নয়। শাহজাদপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার ও তাঁর অফিসের কতিপয় কর্মচারীর দুর্নীতি নিয়ে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদ আমার দৃষ্টিগোচর হলেও ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা সেটি অবগত কি না, তা আমি জানি না। ঊর্ধ্বতনদের কেউই এ বিষয়ে জানতেও চাননি।’ তিনি আরও বলেন, সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার ঘোষ সরকারি গাছ কর্তন বা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে কোনো অনুমতি নেননি। তিনি গায়ের জোরে যেমন দুটি বড় বড় মেহগনিগাছ কাটিয়েছেন, সেভাবে সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করেন। এ ধরনের নির্বুদ্ধিতার জন্য তিনি পূর্ববর্তী কর্মস্থলে শাস্তিপ্রাপ্ত হন বলেও জেনেছি।’

এদিকেভিডিও নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর শাহজাদপুর সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের নতুন তথ্য মিলছে। দলিল লেখক শেড নির্মাণের সময় তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি দুটি বড় মেহগনিগাছ কাটিয়েছেন। একটি বিক্রি করা হলেও অন্যটি দিয়ে তিনি নিজের বাড়ির আসবাব তৈরি করেছেন। গাছ কাটার আগে সরকারি নীতি মানা হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

১৫ আগস্ট রাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো. সোহেল রানা তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে সাবরেজিস্ট্রারের ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তারপর এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সমালোচনার ঝড় উঠতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যায়, সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার ঘোষ একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি দলিলের উৎকোচ বাবদ এক ব্যক্তিকে (তাঁর নাম আনিস) প্রথমে ৩ হাজার টাকা দিলে ওই ব্যক্তি দলিল লেখককে বলেন, স্যার ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে বলেছেন। পরে দলিল লেখক টাকা না দিয়ে সাবরেজিস্ট্রারকে ফোন দিতে বলেন। ওই ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার ঘোষকে ফোন দিয়ে কথা বলে ৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে বলেন, ৩ হাজার ৫০০ টাকার কমে হবে না। বাধ্য হয়ে ওই দলিল লেখক ৩ হাজার ৫০০ টাকাই দেন।

শাহজাদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে কয়েকজন দলিল লেখকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবরেজিস্ট্রারকে দলিলপ্রতি কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। না দিলে তিনি নানা সমস্যা সৃষ্টি করেন। আর এই টাকা সাবরেজিস্ট্রারের পক্ষে গ্রহণ করেন সুমন নামের একজন নকলনবিশ।

 জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘এ বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলেন।’

কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা গ্রামের মো. মানিক বলেন, ‘আমি একটি হেবার ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রি করতে এলে প্রথম দিন আমাকে নানা অজুহাতে দলিল রেজিস্ট্রি না করে পরে আবার আসতে বলেন। আমি পরে অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে রাজি হলে আমার দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেন।’

সংবাদ সম্মেলন ও সরকারি গাছ কর্তনের অনুমতির বিষয়ে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার ঘোষ বলেন, তাঁর সব ধরনের অনুমতি আছে।’ ঘুষ নেওয়ার ভিডিওর ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। তিনি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।