'বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের মানসিক শাস্তি দিতে আন্দোলন করুন'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: বাসস
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: বাসস

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। একটু সময় লাগলেও ঠিকই তাদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা হবে। খুনিদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর পাশাপাশি যারা এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন, সেই কুশীলবদের শনাক্ত করতে কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।

আজ মঙ্গলবার সকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সরকারের মন্ত্রীরা এসব কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত পলাতক খুনিদের দেশে ফেরত আনার পদক্ষেপ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ১৪ দল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, খুনিদের মধ্যে ৪ জনকে শনাক্ত করা যায়নি। কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কূটনৈতিক ও আইনি তৎপরতা অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ফেরানোর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনিদের মানসিকভাবে শাস্তি দিতে তাদের বাড়ির সামনে প্রবাসীদের নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা ছিল, তা নতুন প্রজন্মের জানা উচিত। কেউ কেউ স্বার্থের কারণে হলেও অনেকের দিকে আঙুল তোলে, এটার নিরসন হওয়া উচিত। তাই হত্যাকাণ্ড তদন্তে একটি কমিশন গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর জেলহত্যার তদন্ত করবে এ কমিশন। তবে পলাতকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এ কমিশনে থাকবে না।

দণ্ডিতদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত ২১ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খুনিরা নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার সুযোগ পেয়েছে। খুনিদের অনেক তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। তাই পলাতকদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। একটু সময় লাগতে পারে, তবে অবশ্যই খুনিদের ফেরত আনা হবে।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত থেকে সরকারের কাছে চারটি দাবি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, পলাতক খুনিদের দ্রুততম সময়ে ফিরিয়ে আনতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। খুনিদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। প্রবাসীদের সংগঠিত করে বিদেশে খুনিদের বিরুদ্ধে প্রচার ও সমাবেশ চালানো। ধূম্রজাল দূর করতে নেপথ্যের খলনায়কদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করা।

এর আগে ১৪ দলীয় জোট নেতারা বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৫ আগস্ট এলেই বিভিন্ন দিকে আঙুল তোলা হয়। জাসদের দিকেও সরাসরি অভিযোগ তোলা হয়। এভাবে আঙুল উঠিয়ে আসল খুনিদের আড়াল করা হয়। তাই তদন্ত কমিশন করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, খুনিদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত অন্তত তাদের মুক্ত চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, এটা নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে সরকার। জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে সব দেশের কাছে বঙ্গবন্ধু খুনের তথ্য বিলি করতে পারে।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের খুনিরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকে। তাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মিত্র দেশগুলো নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ব গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তথ্য প্রচার করা।

মতবিনিময় সভায় আরও কথা বলেন জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।