সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দিলে কাজ না করার ঘোষণা মেয়র মোস্তাফিজারের

রংপুর-৩ আসনে এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার (নীল পাঞ্জাবি পরা)। ছবিটি প্রেসক্লাব এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুর-৩ আসনে এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার (নীল পাঞ্জাবি পরা)। ছবিটি প্রেসক্লাব এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। এরশাদপুত্র সাদকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে আজ মঙ্গলবার মিছিল হয়েছে নগরে। গতকাল রাতে দুটি এলাকায় সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। আবার সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দিলে তাঁর পক্ষে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান।

জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত এলাকা রংপুরের সর্বস্তরে জনগণের মধ্যে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ মারা যান। তিনি রংপুর-৩ আসনের সাংসদ ছিলেন। এ আসনে আগামী ৫ অক্টোবর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। পুরো নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)।

নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ঘনিয়ে আসায় এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হচ্ছে। দলের প্রতিষ্ঠাতার এ আসন নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া জাতীয় পার্টি। এ আসনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি ইতিমধ্যে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ আসনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকা রংপুর সিটি করপোরেশন এখন জাতীয় পার্টিরই দখলে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে মেয়র হন মোস্তাফিজার রহমান।

আজ সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাদকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমরা কাজ করব না। ১৯৯১ সালে মিজান চৌধুরী ও শাহ মোয়াজ্জেম এসে নির্বাচন করেছেন। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। আমরা একজন স্থানীয় প্রার্থী চাই। এখানে চারজন স্থানীয় সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন। তাঁদের থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।’

আজ বেলা একটায় এরশাদের ভাতিজা ও রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সাবেক সাংসদ আসিফ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে এরশাদপুত্র সাদ এরশাদকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়ে এরশাদের ভাতিজা আসিফকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য স্লোগান দেওয়া হয়।

মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার বলেছেন, ‘সাদকে প্রার্থী করা হলে স্থানীয় জাতীয় পার্টির অনেক ক্ষতি হবে। রংপুরের জনগণ তা মেনেও নেবে না। জাপার দুর্গ বলে খ্যাত রংপুরে দলের অনেক ক্ষতি হবে। জনপ্রিয়তাও হ্রাস পাবে।’

নিজে প্রার্থী হওয়ার দাবি জানিয়ে আসিফ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা যারা রংপুরে থাকি তাদেরই প্রার্থী করা হোক। বহিরাগত কেউ এসে প্রার্থী হোক এবার রংপুরের মানুষ তা দেখতে চায় না।’

গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়াহাট, পাগলাপীরসহ দুটি এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনগণ এরশাদপুত্র সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতা–কর্মীরা প্রতিবাদ করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

রংপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব মাসুদার রহমান বলেন, আসিফ শাহরিয়ারের সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিষয়টি দলের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাকায় জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে চারজন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এঁরা হলেন এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ, এরশাদের ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন নেছা টুম্পা, রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির।