রোহিঙ্গা নারীর স্বামী বাংলাদেশি পাসপোর্টে বারবার যান সৌদি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রোহিঙ্গা এক নারীর ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সুরক্ষিত সার্ভারে থাকার ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। ঘটনার ১৩ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে রোহিঙ্গা নারীর স্বামীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, তাঁর স্বামী নজির আহমদও রোহিঙ্গা। বাংলাদেশি পরিচয়ে পাসপোর্ট করে তিনি একাধিকবার সৌদি আরব যান।

প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান প্রথম আলোকে বলেন, সার্ভারে ভুয়া এনআইডি কীভাবে দেখা যাচ্ছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। রোহিঙ্গা নারীর এনআইডিটি চট্টগ্রাম থেকে করা হয়নি। এ রকম আরও ৪৬টি ভুয়া এনআইডি পাওয়া গেছে। যেগুলোর কোনো দালিলিক কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে নেই। শনাক্ত হওয়া ভুয়া এনআইডিগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে সার্ভার সুরক্ষাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা রয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে ইসির সার্ভারে ভুয়া এনআইডি কীভাবে হলো, কোন জায়গা থেকে করা হয়েছে, এনআইডি ক্রমিক নম্বরের ফরম কোথা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে—এসব বিষয় বের করা জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, কারা জড়িত, সেটিও বের করা উচিত।

রমজান বিবি নামের এক রোহিঙ্গা নারী ‘লাকী’ নাম দিয়ে স্মার্টকার্ড উত্তোলনের জন্য তাঁর এনআইডি নিয়ে গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। সার্ভারে খোঁজ করলে লাকীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে বলে দেখা যায়। লাকীর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কিংবা লাকীর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়নি। কাগজপত্রে কোথাও কিছু নেই। এ ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

ঘটনার পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানা-পুলিশও তদন্ত শুরু করে। ঢাকা থেকে গঠিত দুই সদসে৵র তদন্ত কমিটি কাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আসতে পারে।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল আলমকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয় ১৯ আগস্ট। আরেক সদস্য হলেন পাহাড়তলী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এম কে আহমদ।

তদন্ত কমিটির প্রধান কোতোয়ালি থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সার্ভারে ভুয়া এনআইডির সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এটি প্রযুক্তিগত বিষয়।

লাকীর স্বামীও রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা নারী লাকীর স্বামী নজির আহমদও রোহিঙ্গা। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় ইয়াবা উদ্ধারের ছয়টি ও অবৈধ অনুপ্রবেশের একটিসহ সাতটি মামলা রয়েছে। কার মাধ্যমে কীভাবে স্ত্রী লাকীকে এনআইডি নিয়ে দিয়েছিলেন রিমান্ডে পুলিশকে জানিয়েছেন নজির। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলছে না পুলিশ। গত সোমবার বিকেল থেকে নজিরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান গতকাল তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯০ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন নজির। এরপর রোহিঙ্গা শিবিরে ছিলেন। তাঁর আইডি নম্বর ৬০১১৩। জিজ্ঞাসাবাদে নজির নিজেকে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করেন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব যান। দেশে ফিরে রোহিঙ্গা নারী লাকীকে বিয়ে করেন। হাটহাজারীর মির্জাপুর এলাকার আবদুস সালাম ও তাঁর স্ত্রীকে লাকীর মা-বাবা পরিচয় দিয়ে এনআইডি করান। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। আবদুস সালাম পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১২ সালের নগরের পতেঙ্গার ঠিকানা দিয়ে রোহিঙ্গা নজির আহমদ পাসপোর্ট নেন। ২০১৬ সালে এটি হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আবার পাসপোর্ট নেন। এটি বর্তমানে তাঁর কাছে রয়েছে। সেই পাসপোর্ট দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত রোববার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নজিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একজন রোহিঙ্গা হয়ে নগরের পতেঙ্গার ঠিকানা দিয়ে কীভাবে পাসপোর্ট পেলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন কীভাবে দেওয়া হলো, তা যাচাই-বাছাই চলছে।