খুনের আসামির পক্ষে সরকারি কৌঁসুলি!

বগুড়ায় এক গৃহবধূ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত (অভিযুক্ত) পলাতক আসামির পক্ষে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি লিখিত সুপারিশ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ গত ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলার পলাতক আসামির পক্ষে নিজ হাতে লিখিত সুপারিশ করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (২) মো. শাহাদৎ হোসেন।

বিষয়টি আদালতে জানাজানি হলে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত কৌঁসুলি নুরুস সালাম আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে শাহাদতের বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। তাতে বলা হয়, এই মামলায় আসামির সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই চিঠি লিখেছেন। এই অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার গৃহবধূ জোবেদা (৪০) হত্যায় ২০০৫ সালে থানায় মামলা হয়। মামলা করেন গৃহবধূর ভাই সারিয়াকান্দির চর গোদাগাড়ীর মো. মোকলেছুর রহমান প্রামাণিক। উপজেলার নারচী তরফদারপাড়ায় জোবেদার (৪০) বিয়ে হয় অকি প্রামাণিকের সঙ্গে। পারিবারিক কলহের জেরে আগস্টে তিনি খুন হন। ১৯ আগস্ট স্থানীয় একটি সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে থেকে জোবেদার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

এ মামলায় তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ২২ এপ্রিল অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে পলাতক আসামিরা হলেন জোবেদার স্বামী মো. অকি প্রামাণিক, একই এলাকার বাসিন্দা মো. ছানোয়ারুল ইসলাম, উপজেলার চরহরিণা এলাকার মো. গোকুল প্রামাণিক (৪০), মো. অহিদুল ইসলাম (৪০), নারচী বিলপাড়ার মো. আবদুল বাছেদ মোল্লা, চরহরিণার মো. মানিক মণ্ডল (৪৫) ও জামাল উদ্দিন মণ্ডল (৩৫)। 

আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালতে এ মামলায় ইতিমধ্যে ১২ জন সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিচার চলছে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২–এ। মামলার বাদী রাষ্ট্র। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে মামলা লড়ছেন শাহাদৎ হোসেন। ১৮ এপ্রিল মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছানোয়ারুলের পক্ষে লিখিত সুপারিশ করেছেন।

এ সম্পর্কে শাহাদৎ হোসেন বলেন, দরখাস্তকারী রাষ্ট্রপক্ষ। এটি হত্যা মামলা। এ মামলায় এর আগে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আসামি ছানোয়ার হোসেন বরাবর পলাতক রয়েছেন। এ অবস্থায় বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। পরে তাঁর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (স্টেট ডিফেন্স) দেওয়া হয়। পলাতক আসামির পক্ষে বাদীপক্ষের ১ ও ২ নম্বর সাক্ষীকে জেরা করা প্রয়োজন। অন্যথায় পলাতক আসামির ক্ষতির কারণ ঘটবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে সাক্ষীদের পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের (রি-কল) অনুমতি দিতে মরজি হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসামিপক্ষের হয়ে এ ধরনের আবেদন করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে শাহাদৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছানোয়ারুল পলাতক। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী নেই। এ কারণে বিচারক রাষ্ট্রপক্ষকে আইনজীবী দেওয়ার কথা বলেছেন। কারণ, কোনো সাক্ষীকে তো কেউ ছানোয়ারের পক্ষে জেরা করতে পারেনি। এ কারণে মামলাটি ত্রুটিপূর্ণ হয়। মামলার বিচার সম্পূর্ণ সঠিক করার জন্য সাক্ষীদের রি–কল (পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ) করা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবী ছানোয়ারের পক্ষে নিয়োগ পেলে তাঁর এ আবেদন করার কথা। আমিও তো রাষ্ট্রের আইনজীবী। এ কারণে আমি দরখাস্ত দিয়েছি।’ 

আবেদন পাওয়ার পর ওই আদালতের বিচারক বেগম ইশরাত জাহানের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদৎ বলেন, বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেননি। আবেদনের বিষয়টি তাঁর (বিচারক) সামনে না তুলতে বলেন। এ আবেদনের বিষয়ে কোনো আলোচনা করতেও নিষেধ করেন।