সাঁওতালপল্লিতে হামলার তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি

গাইবান্ধা
গাইবান্ধা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে হামলার ঘটনায় পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আজ বুধবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম পার্থ ভদ্রের আদালতে এ আবেদন করা হয়েছে। সাঁওতালদের পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম ১১ জনের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই আবেদন জানান। আদালত আগামী ৪ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

নারাজির ওই আবেদনে যে ১১ জনের নাম দেওয়া হয় তাঁরা হলেন গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, রংপুর চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়াল, মহাব্যবস্থাপক আবদুল মজিদ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, গোবিন্দগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও আবদুল হান্নান, গোবিন্দগঞ্জের তৎকালীন ওসি সুব্রত কুমার সরকার, তৎকালীন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান মাহবুর, পুলিশ কনস্টেবল সাজ্জাদ হোসেন, মিনহাজুল ইসলাম, আবদুল মতিন ও বাবলু মিয়া।

বাদীপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও রফিকুল ইসলাম সিরাজী, গাইবান্ধা জজকোর্টের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম ও মুরাদুজ্জামান রব্বানী নারাজি শুনানি করেন।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে হয়। এতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের তিন ব্যক্তি নিহত হন। এ সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ সদস্য তিরবিদ্ধ হন। পরে পুলিশ এক অভিযানে ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।

গত ২৩ জুলাই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্র গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে জমা দেওয়া হয়। ঘটনার দুই বছর আট মাস পর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) গাইবান্ধা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনর্চাজ) সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার এই অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ শাকিল, একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম ও আইয়ুব আলী, চিনিকলের (জিএম-অর্থ) নাজমুল হুদা এবং চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলালসহ ৯০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এই প্রতিবেদন দেওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করেন সাঁওতালরা।

আজ দুপুরে পিবিআইয়ের দাখিল করা অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আইনজীবী জেডআই খান পান্না, সিপিবি গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি মিহির ঘোষ, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, সিপিবি নেতা মুরাদুজ্জামান রব্বানী, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি প্রতিভা সরকার, সিপিবি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম ও মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম প্রমুখ।

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই গাইবান্ধা ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার বলেন, পিবিআই ঘটনা তদন্তে চাক্ষুষ সাক্ষী, জখমি, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ঘটনায় জড়িত কোনো পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে পারেনি। এমনকি ভিডিও, পত্রিকার ছবি বিশ্লেষণ করে এই ঘটনার সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত আছে বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে কোনো পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তিনি আরও জানান, একইভাবে ব্যাপক তদন্ত করে এই ঘটনার সঙ্গে সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।